Author Archives: Akik Russel-আকিক রাসেল
ঘুরে এলাম হারিয়ে যাওয়া শহর “পানাম সিটি”
ঘুরে এলাম হারিয়ে যাওয়া শহর “পানাম সিটি”
২২ শে জুন, ২০১৮, শুক্রবার। বাসায় আমি একা। বৌ বাচ্চারা সব ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে। অবশ্য আজকে তাদের বাসায় ফেরার কথা। আমি দোআহারী হওয়ায় নিশ্চিন্তে ফজরের সলাত আদায় করে সেই রকম একটা ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালাম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। হঠাৎ মোবাইলের মিষ্টি ছান্দিক ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য বিছানা ছাড়তেই হলো। ভাবলাম বৌ ফোন দিয়েছে রওনা হওয়ার সংবাদ দিয়ে। কিন্তু না, দেখি দ্বীনি ভাই সাইদুজ্জামান খান ফোন দিয়েছেন। কল রিসিভ করে সালাম দিতেই বললেন, কি খবর বাসায় নাকি? চলেন কোন জায়গায় ঘুরে আসি। আমি বললাম, কোথায় যাবেন? বললো, চলেন ডেমরা, সোনারগাঁ’র দিকে। আমি একটু সময় চেয়ে নিলাম। কারণ বৌ বাচ্চারা এসে পড়লে খাবে কি? ওদের জন্য তাই স্পেশাল ডিম মাসালা আর ভাত রান্না করে গোসল সেরে রেডি হয়ে গেলাম। সোয়া এগারটার সময় বাসা ছেড়ে বেড়িয়ে পড়লাম মুক্ত হাওয়ার স্বাদ নিতে।
সাঈদ ভাই আসতে আসতে প্রায় পৌনে বারোটায় দক্ষিণ বনশ্রী সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে শেয়ারে অটোরিক্সায় উঠে পরলাম। গন্তব্য আপাতত ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার। ঈদের ছুটির কারণে রাস্তা ফাঁকা থাকায় আধা ঘন্টার মধ্যেই পৌছে গেলাম। সেখান থেকে ডাইরেক্ট সোনারগাঁও যাবার পাবলিক সার্ভিস গাড়ী না পাওয়ায় আসমানী পরিবহনে গেলাম মদনপুর। সেখান থেকে নাকি লেগুনা যায় মোগরাপাড়া বাসস্ট্যান্ড। আমরা মদনপুর নেমে মোগরাপাড়া যাওয়ার লেগুনায় চড়তে যাবো কিন্তু দেখি যাত্রী বলতে আমরাই দু’জন। ওরা দুজন নিয়ে কখনোই লেগুনা ছাড়বে না। সুতরাং এই ভ্যাপসা গরমে আধা ঘন্টাও বসে থাকা লাগতে পারে। কি করা যায় এমন পরিস্থিতিতে সেটা ভাবতে যেই না শুরু করেছি হঠাৎ দেখি একটি খালি বাস থেকে হেলপার যাদুঘর! যাদুঘর! সোনারগাঁও বলে ডাকতেছে। আমরা দ্রুত বাসে উঠে বসলাম। কন্ডাক্টরকে ভাড়া জিজ্ঞেস করতেই বললেন হুজুর ঈদের আগে যা দিতেন তাই দেন। আমি বললাম, এবারই প্রথম যাচ্ছি। শুনে বললো, তাহলে আপনি দশ টাকা দেন। আমাদেরকে বাস সোনারগাঁও যাদুঘরের সামনে নামিয়ে দিলো। আমরা নেমেই এক রিক্সাওয়ালা ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে দেখার মতো মোটামুটি ভালো প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে কোনদিকে? সে বললো, চলেন পানাম নগর নিয়ে যাই, ওখানে পুরাতন বাড়িগুলো দেখবেন, পরিবেশও সুন্দর। ভাড়া না মিটিয়েই উঠে পরলাম। রিক্সা ছুটে চললো পানাম নগরের দিকে। গাছের ছায়া আর সবুজ পাতার ফাকঁ গলে আসা মিষ্টি মধুর হাওয়ায় দেহ জুড়িয়ে যাচ্ছিলো। মিনিট দশেকের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম প্রাচীন বাংলার ভোগবাদীদের নিদর্শন পানাম নগরের মূল ফটকে। রিক্সা ভাড়া রাখলো দশ টাকা।
মূল ফটকের পাশেই দর্শনার্থীদের জন্য দর্শন ফি বাবদ ১৫টাকা করে অগ্রিম পরিশোধ করে টিকিট সংগ্রহ করার সুবন্দোবস্ত করা হয়েছে। আমরাও যথারীতি টিকিট কেটে ফটক পেরিয়ে ইতিহাসের পাতায় “হারিয়ে যাওয়া শহর” হিসাবে পরিচিত পানাম নগর বা পানাম সিটির মূল রাস্তায় প্রবেশ করলাম। জুমু’আর সালাতের সময় হয়ে যাওয়ায় আমরা মাসজিদ তালাশ করতে লাগলাম। মূল রাস্তা ধরে কিছুদূর যেতেই ডান পাশে পুকুর পাড়ে “বায়তুস সালাহ” নামে একটি মাসজিদ খূঁজে পেলাম। সেখানে সালাত আদায় শেষে শুরু হলো ঘুরাঘুরি। গ্রামের লোকজন রাস্তার আশে পাশে মৌসুমী ফলের পশরা সাজিয়ে বসেছিল। ডেওয়া, কালো জাম, দেশী কলা, আম, জামরুল, গাব, কামরাঙ্গা হরেক রকমের ফল। রসালো ফলের লোভে আমার কন্ঠনালী শুকিয়ে এলেও কিছু করার ছিলো না। কারণ পকেটে টাকা থাকলেও শাওয়ালের নফল সিয়ামের কারণে জিহ্বাকে সংযত রাখতে হলো। অবশ্য সাঈদ ভাই বাচ্চাদের মতো যথাসাধ্য খেয়েই যাচ্ছিলেন জাম ভর্তা, কলা, জামরুল, আলুচপ, পিয়াজু…। আমরা অবশ্য দু’জনেই টাটকা ডেওয়া আর জামরুল কিনে নিয়েছিলাম ব্যাগ ভর্তি করে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ২৭ কিলোমিটার দূরত্বে মোগরাপাড়া পয়েন্টের পাশে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার উত্তরে সোনারগাঁও পৌরসভার একটি প্রাচীনতম শহর এই পানাম সিটি। ১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনাগাঁওয়ে। ঈসা খাঁর যাতায়াত ছিল এই নগরীতে। সেই সময়টাতেই অর্থাৎ সুলতানি আমলে বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে। পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদীপথে বিলেত থেকে আসতো বিলাতি থানকাপড়, দেশ থেকে যেতো মসলিন। এই সোনারগাঁওয়েরই একটি এলাকার নাম পানাম। স্থানটি পুরনো রাজ-রাজরাদের আমলে প্রসিদ্ধ এলাকা ছিল। পরে ইংরেজ শাসনামলে এখানে অভিজাত হিন্দুদের আবাস গড়ে ওঠে। ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এখন পর্যন্ত টিকে থাকা ইমারতগুলো মূলত সেসময়েই তৈরি। অসাধারণ কারুকার্যময় এবং সুবিন্যস্ত একটি প্রাচীন নগরী হিসেবে পানাম এখনও সবার মন কাড়ে।
পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি পানাম নগর। World Monuments Fund ২০০৬ সালে Panam City কে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় প্রকাশ করে। বড় নগর, খাস নগর, পানাম নগর -প্রাচীন সোনারগাঁর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। আজ থেকে প্রায় ৪৫০ বছর আগে বার ভূইয়ার দলপতি ঈশা খাঁ ১৫ শতকে বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন সোনারগাঁওতে। সোনারগাঁর ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগরী গড়ে ওঠে।
পানাম নগরে ঢুকেই আপনি হারিয়ে যাবেন কোন এক অতীতে। এই শান্ত সুনিবিড় নগরে কালের সাক্ষী হয়ে রাস্তার দুধারে দাড়িয়ে আছে অর্ধশত ভবন। সংস্কারের অভাবে ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে নোটিশ ঝুলছে “ঝুঁকিপূর্ণ ভবন”। ভবনের জানালাগুলো ইটের গাঁথুনি দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুরনো দালানগুলোর কোনটা দোতলা আবার কোনটা এক তলা। বাড়িগুলোর স্থাপত্য নিদর্শন দেখলেই বোঝা যায় এখানে ধনী বণিক শ্রেণীর ভোগ-বিলাসী লোকেরা বসবাস করতেন। বাড়ীগুলোতে মোঘল ও গ্রীক স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ দেখা যায়। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি বাড়ির কারুকাজ স্বতন্ত্র। কারুকাজ, রঙের ব্যবহার এবং নির্মাণকৌশলের দিক থেকে নতুন নতুন উদ্ভাবনী কৌশলের প্রমাণ পাওয়া যায় বাড়িগুলোতে। প্রায় প্রতিটি বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই লোহার তৈরি ব্রাকেট। জানালায় ব্যবহার করা হয়েছে লোহার গ্রিল এবং ঘরে বাতাস চলাচলের জন্য ভেন্টিলেটার ব্যবহার করা হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বাড়িগুলোতে কাস্ট আয়রনের নিখুঁত কাজ করা হয়েছে এবং ইউরোপের পুরোনো বাড়িগুলোতে ব্যবহৃত কাস্ট আয়রনের কাজের সাথে এই কাজের অনেক মিল পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও মেঝেতে লাল, সাদা, কালো মোজাইকের কারুকাজ লক্ষ্যনীয়। নগরীর ভিতরে আবাসিক ভবন ছাড়াও আছে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, মঠ, গোসলখানা, নাচঘর, পান্থশালা, চিত্রশালা, খাজাঞ্চিখানা, দরবার কক্ষ, গুপ্ত পথ, বিচারালয়, পুরনো জাদুঘর।
এছাড়া আছে ৪০০ বছরের পুরনো টাকশাল বাড়ি। পানাম নগরে টিকে থাকা বাড়িগুলোর মধ্যে ৫২টি বাড়ি উল্লেখযোগ্য। একটি দশ ফুট প্রশস্ত রাস্তা পানাম নগরীর ভেতর দিয়ে চলে গেছে। এটিই মূল সড়ক। আর এর উত্তর পাশে ৩১টি আর দক্ষিণ পাশে ২১টি বাড়ি রয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়ি দুটি অংশে বিভক্ত। একটি বহির্বাটী এবং অন্যটি অন্দর-বাটি এবং বাড়ির সামনে উন্মুক্ত উঠান আছে। প্রতিটি বাড়ি একটি থেকে অপরটি নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত। এই রাস্তার দুপাশেই মূলত পানামের বাড়িগুলো তৈরি করা হয়েছে।
ভোগ বিলাসের নিখুঁত পরিকল্পনার ফসল ছিলো এই পানাম নগর। পানাম নগরের পরিকল্পনায় ছিল আধুনিকতার ছোঁয়া। নগরে পানি সরবাহের জন্য দু’পাশে কাটা হয় (যা এখনও আছে) ২টি খাল এবং ভেতরে খনন করা হয় ৫টি পুকুর। আর সুপেয় পানির জন্য পানাম নগরের প্রতিটি বাড়িতেই ছিল কূপ বা ইঁদারা। নগরীতে যেন জলাবদ্ধতা না হয় সেই জন্য পানি নিষ্কাশনের জন্যও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেয়া চালু ছিল।
পানাম নগরের সুরক্ষিত স্থাপনা ছাড়াও আপনি ঘুরে দেখতে পারেন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহীর শাসনামলে নির্মিত একটি মসজিদ। মসজিদটির নাম গোয়ালদী হোসেন শাহী মসজিদ। সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর থেকে পশ্চিম দিকে রয়েছে এই মসজিদ। মগরাপাড়া থেকে দক্ষিণ দিকে আরও কিছু ইমারত আছে যেমন বারো আউলিয়ার মাজার, হযরত শাহ ইব্রাহিম দানিশ মন্দা ও তার বংশধরদের মাজার, দমদম দূর্গ ইত্যাদি। পানাম নগরে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন। ঈসা খাঁর ছেলে মুসা খাঁর প্রমোদ ভবন যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে ফতেহ শাহের মাজার, সোনাকান্দা দুর্গ, পঞ্চপীরের মাজার, চিলেকোঠা সহ অসংখ্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন।
দুনিয়ালোভী আখিরাতবিমুখ ইনসাফহীন ভোগবিলাসী মানুষজন যে মাজলুমের দীর্ঘশ্বাসে কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যান আর রেখে যান বিলাসবহুল কুকির্তীগাথা তাদের বসবাসকৃত স্থাপনার প্রতিটি ইট, কাঠ, লৌহের কণায় কণায় তা আরেকবার অবলোকন করার সৌভাগ্য করে দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে আন্তরিক শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
যেভাবে যেতে পারেন-
গুলিস্তান থেকে স্বদেশ, বোরাক ও সোনারগাঁ নামক বাসে উঠে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় নামতে হবে। মোগরাপাড়া থেকে লোকশিল্প জাদুঘরের দূরত্ব প্রায় ২ কি.মি.। চাইলে রিক্সা অথবা সিএনজি তে করে যেতে পারেন। যদি তাড়াতাড়ি যেতে চান তাহলে সিএনজি নিয়ে নিন। তা নাহলে রিক্সাতে যাওয়াই ভাল। গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে রিক্সায় যেতে খারাপ লাগবেনা। তাছাড়াও নিজস্ব যানবাহন নিয়েও যেতে পারেন। জাদুঘরের সাথেই আছে পার্কিং স্থান। এখান থেকে পানাম নগর খুব কাছেই। চাইলে হেঁটেই যেতে পারবেন।
ঘুরে এলাম ফুলের গ্রাম “সাবদী”
অফিসের একঘেয়েমি কাজ করতে করতে হাত-পাগুলো পর্যন্ত অনুযোগ করা শুরু করেছিলো। ঘুর ঘুর করা মনটাও হাপিয়ে উঠেছিল। কি আর করা মোবাইল খোলা রাখলে ছুটি কাটানোটা আমার জন্য দায় হয়ে যায়! তাই ফজরের পর মোবাইল বন্ধ করে দিলাম এক ঘুম। এক ঘুমে এগারোটা। বৌ আর বাচ্চাকে আগেই বলে রেখেছিলাম যেন ডাকাডাকি না করে। আমি দোআহারী হওয়ায় এমনিতেই সকালে কেও ডাকে না অফিস টাইম ছাড়া।
যাক উঠে ফ্রেশ হয়ে বারোটায় ছোট ভাই-বন্ধু শাওনকে ফোন দিলাম। উদ্দেশ্য হঠাৎ মাথায় উদয় হওয়া নারায়ণগঞ্জের সাবদি ঘুরতে যাবো। ও প্রথমে অনেক অজুহাত দেখালেও পরে রাজি হলো। আমি যুহরের সলাত আদায় করে বেলা আড়াইটার দিকে বের হলাম। বৌদ্ধমন্দির স্টপেজ থেকে লাব্বাইক বাসে উঠে পড়লাম সাইনবোর্ড নামবো বলে। বাসে উঠেই ট্রাভেলার্স এক্সপ্রেস গ্রুপের Saiful Gazi আর Rafiqul Islam ভাইকে নক দিলাম। সাইফ ভাই বললো আজকে সকালেই নাকি নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা এসেছে তাই সরি…😢। এরপর কয়েকবার চেষ্টায় রফিক ভাইকে পেলেও কথা দিলেন ফিরতি পথে চাষারা এসে সঙ্গ দিবেন। আমি সাইনবোর্ড নেমে লোকাল সিএনজি নিয়ে চাষারা পৌছাতে প্রায় সোয়া চারটা বেজে গেল। গিয়ে রফিক হলের সামনে শাওনকে পেলাম। এরপর রিক্সায় দুজনে চললাম বন্দরের উদ্দেশ্যে। মিনিট দশেকের মধ্যেই বন্দর চলে এলাম। এরপর নেমে জনপ্রতি দুই টাকা টোল দিয়ে ট্রলারে শীতলক্ষ্যা নদী পার হলাম।
ওপারে নেমে ব্যাটারী চালিত রিক্সায় রওনা দিলাম কাঙ্খিত ফুলের গ্রামের দিকে। মিনিট বিশেকের মধ্যেই সাবদী গ্রামের নদীর পাড়ে পৌঁছে গেলাম। শিল্পাঞ্চল নারায়নগঞ্জের বুক চিরে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যার পূর্ব পারেই এই ফুলের গ্রাম। আমরা যেখানে নামলাম সেখানকার সাইনবোর্ডে লেখা দেখলাম “হাজরাদী চাঁনপুর নদীর পাড়, সাবদী বাজার”। আসরের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় মাসজিদে রব্বে কারীমের হক্বটা আদায় করে নিলাম। এরপর সোজা নদীর ঘাটে দাড়িয়ে বুক ভরে বিশুদ্ধ বাতাস টেনে নিলাম কিছুক্ষণ। শরীরটা প্রাকৃতিক ফুয়েল পেয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠলো। ওলি হয়ে আমরা হেঁটে চললাম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
ঢাকার খুব কাছেই এমন সুন্দর একটা গ্রামের পীচ ঢালা পথ ধরে হেঁটে চলতে ভালোই লাগছিলো। বাংলাদেশের সব গ্রামই সুন্দর, কিন্তু কিছু গ্রাম এর থাকে আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে। ধরুন সুন্দর একটি রাস্তা ধরে হেঁটে বা গাড়িতে চলছেন আর রাস্তার পাশ ঘেষে আছে হলুদ, লাল, সাদাসহ বিভিন্ন রঙের বাহারি ফুল গাছের সারি। তবে আপনার পথচলাটা কতটা আনন্দময় হবে একবার ভাবুন তো। হ্যা, এমনি একটি গ্রাম সাবদী। যা কি না ফুলের গ্রাম সাবদী বলে এলাকার মানুষজন জানে। চারিদিকে শুধু ফুল আর ফুল। সারি সারি লাল, হলুদ, কমলা, সাদা রঙের গ্যালাডিয়া, নানা রঙের গাদা, চেরী, জিপসি, ডালিয়া, গোলাপ, জবা আর কাঠবেলীর বাগান দেখে যে কারোই মন ভালো হয়ে যায়। ওখানে গেলে যে শুধু গ্রাম আর ফুলের বাগান দেখা হবে তা কিন্তু নয়, এর সবচেয়ে অসাধারণ হলো প্রেমতলা, লক্ষ্মণবন্দে নদীর পার, অনায়াসেই একটা বিকাল আপনি নির্দোষ আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে আসতে পারবেন। মন চাইলে আর প্রস্তুতি থাকলে নদীতে নেমে কিছুক্ষণ ঝাপাঝাপি করে নিজেকে শীতল করে নিতে পারবেন। মন চাইলে কিছুটা সময় নৌকা ভাড়া করে ঘুরতেও পারবেন।
মূল রাস্তা ছেড়ে ডানেই দিগন্ত জোড়া ফুল আর ফুল। কাঠমালতি, গাঁদা, বেলী, চেরী, জিপসি, গ্যালাডিয়া, ডালিয়া, গোলাপ, জবা আর কাঠবেলীর ফুলে ছেয়ে আছে জমিনগুলো। দূর থেকে মনে হয় যেন দিগন্ত জুড়ে রঙ বেরঙের কার্পেট দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে মাঠের পর মাঠ। আমি আর শাওন ঘন্টা খানেক গ্রামের মেঠো পথে হেঁটে হেঁটে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ফুলচাষীদের সাথে গল্পও করলাম কিছুক্ষণ। সৌন্দর্য্য উপভোগের পাশাপাশি মোবাইলের ক্যামেরায় স্মৃতি ধরে রাখতে ভুল করিনি।
মাগরিবের সময় ঘনিয়ে আসছিলো। আমরা আর দেরী না করে রিক্সা নিয়ে ফিরে চললাম বন্দরের দিকে। বন্দরে পৌঁছেই ট্রলার পেয়ে গেলাম। ওপারে পৌঁছে যথারীতি ২টাকা টোল পরিশোধ করে যেইনা রিক্সায় উঠেছি অমনি রফিক ভাই ফোন দিলেন, উনি বন্দরে ওয়েট করতেছেন আমাদের জন্য। আমরা রিক্সা ছেড়ে দিলাম। মনির হোটেলের সামনে Meet হলো। এরপর তিনজনে নতুন রিক্সায় চাষাড়া শহীদ মিনারে এসে নামলাম। নেমে প্রথমেই চাষাড়া মোড়ের মসজিদে মাগরিবের সলাত আদায় করে নিলাম। এরপর শহীদ মিনারের পাশে শাওনের পরিচিত মোবাইল হোটেল থেকে লুচির সাথে কলিজা ভূনা শেষ করে স্যূপ খেলাম। মানটা মোটামুটি ভালোই। যদিও গরম চা খেলে আমার জিহ্বায় ফোস্কা পুড়ে যায় তবুও টাটকা তেতুল, মরিচ আর পুদিনা পাতার চা দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না।
আড্ডার ফাকে ফাকে শাওনের মোবাইলে ওর বৌয়ের ফোন আসছিলো। বাসায় ওর মামা বেড়াতে এসেছে। তাই চা টা শেষ করে পঞ্চবটি এলাকার বাসিন্দা রফিক ভাইয়ের আন্তরিক উপভোগ শেষে বিদায় নিয়ে দ্রুত রওনা দিলাম ঢাকার দিকে। পথিমধ্যে শাওন নেমে গেলো স্টেডিয়াম এলাকায় আর আমি চললাম একটা সুন্দর বিকেল আর সন্ধা উপভোগের স্মৃতি নিয়ে আপনালয়ে…
নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলায় সাবদী গ্রামের পাশাপাশি এলাকা দিঘলদী, কল্যাণদী, মাধবপাশা, সেলসারদী গ্রামেও রয়েছে বিঘার পর বিঘা ফুলের বাগান। আপনার বোরিং লাগলে খুবই কম সময়ের মধ্যে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন, কাটিয়ে আসতে পারেন উপভোগ্য কিছু মুহূর্ত। এমনি একটি জায়গা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সাবদী গ্রাম।
যেভাবে যাবেন :
গুলিস্থান জিপিও থেকে নারায়ণগঞ্জ গামী নন এসি উৎসব বা বন্ধন এ বা এসি বিআরটিসি তে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে চাষারা নেমে রিক্সায় একদম বন্দর। এরপর ২ টাকায় ইঞ্জিন নৌকায় (ট্রলার) বা ৫ টাকায় বৈঠা নৌকায় পার হতে পারেন আপনি। তারপর অটো বা রিক্সায় সাবদী।
এ্যাডভেঞ্চার এট সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়
এ্যাডভেঞ্চার এট সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়
আমাদের এই এডভেঞ্চারটা ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর।
সরকারী ছুটির কারণে কাজের প্রচন্ড প্রেসারের মাঝেও শুক্র-শনি (১৫-১৬ ডিসেম্বর) দুইদিন ছুটি পেয়ে গিয়েছিলাম। কনফার্ম ছুটির কারণে তাই ট্যুর ফাইনাল হয়ে গিয়েছিলো তিনদিন আগেই। কিন্তু ট্যুরের আগের দিন একের পর এক একজন করে ট্যুর ক্যানসেল করতে লাগলো বিভিন্ন অজুহাতে। যেদিন যাত্রা শুরু হবে সেদিনও কনফার্ম একজন সম্পূর্ণ আজাইরা অজুহাতে Uটার্ন নিলো। বাকি রইলাম শাওন আর আমি দুইজন। শুক্রবার আমার দাওয়াতী প্রোগ্রাম থাকায় বিকেলেই ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ বাসা থেকে বিদায় নিয়ে এসেছি। উদ্দেশ্য প্রোগ্রাম শেষ করে সরাসরি কমলাপুর চলে যাবো। কিন্তু প্রোগ্রাম চলাকালীন রাত আটটায় শাওন ফোন দিলো শুধু দু’জন গিয়ে মজা পাবো না, চলেন বাসায় ফিরে যাই। আমি বললাম, তুমি আসছো নারায়ণগঞ্জ থেকে আর আমিও বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এসেছি সুতরাং বাসায় ফেরা সম্ভব নয়! বৌ বাচ্চা পচানি দিবে! তুমিও না গেলে আমি একাই যাবো। শেষে শাওন বললো আপনি একটু আনিস ভাইকে (অফিস কলিগ) ফোন দেন। আনিসকে ফোন দিতেই বললো- ভাই আমি সাড়ে দশটার মধ্যে কমলাপুর উপস্থিত হচ্ছি। যাক কিছুটা স্বস্তি পেলাম। রাত সাড়ে ন’টায় কমলাপুর চলে এলাম। দেখি শাওন চলে এসে টিকিট কিনে রেখেছে তিনজনের। চিটাগাং মেইল ট্রেন। টিকিট ১১০টাকা জনপ্রতি। ট্রেন সাড়ে দশটায়। আনিস ঠিক সাড়ে দশটায় ধুম্র উদগীরন করতে করতে উপস্থিত হলো। ট্রেন লেট এ আসলো। প্রায় এগারোটায় দুই নম্বর প্লাটফর্মে ঢোকার হুইসেল শোনা গেলো। মেইল ট্রেন ভ্রমণে অভ্যস্ত আনিস হুইসেল শুনেই বললো- ভাই আমি আর শাওন শেষ প্রান্তে যাচ্ছি, না হয় সীট খালি পাওয়া যাবে না। আমি আর একজন veterinarian জাহিদ ভাই (উনিও ঢাকা থেকে চিটাগাং ভেটেরিনারি মেডিকেলে যাচ্ছিলেন, প্লাটফর্মে দেখা হয়ে গেছে) অপেক্ষা করতে লাগলাম। মিনিট দশেক পর শাওন ফোন দিলো ২ নম্বর বগিতে সীট পাওয়া গেছে। ট্রেন মূল প্লাটফর্মে ঢোকার পর দেখলাম লোকজন দৌড়ে জানালা দিয়ে ভিতরে ঢুকছে। ভয় পেয়ে গেলাম আমরা উঠবো কিভাবে! যাক শেষ পর্যন্ত ভীড় ঠেলে ২নম্বর বগিতে উঠে বসলাম আগেই দখল করে রাখা সীটে। কিন্তু একি! সীটের যে অবস্থা তাতে শীতের রাতে আট ঘন্টার ভ্রমণ শেষে ঘুরাঘুরি করার এনার্জি থাকবে তো! ট্রাভেলার মোট তিনজন মিলেই যাত্রা শুরু হলো সাড়ে এগারোটায় ‘শীতের দ্বিতীয় সফর’ সীতাকুন্ড ভ্রমণ। গল্পের বাকি অংশটুকু আমাদের ৩ ট্রাভেলার্স কে নিয়েই!
ট্রেন এগিয়ে চলছে মোটামুটি ৫০ কিমি. গতিতে। ট্রেন ভৈরব পৌছে কিছুক্ষণ বিরতি দিলো। এই সুযোগে সিদ্ধ ডিম আর ব্রেড খেয়ে নিলাম। ১৫ মিনিট যাত্রা বিরতির পর ট্রেন আবর ছুটে চললো। কিন্তু প্রচন্ড কুয়াশর কারণে এবার গতি মন্থর। ট্রেন ভোর রাতে আখাউড়া জংশনে পৌঁছলে আবার বিরতি দিলো যাত্রায়। এখানে কয়লার আগুনের তাপে বানানো মজাদার চা খেলাম সাথে মসলাদার চানাচুর! ট্রেন আবার ছুটে চললো। অবশেষে সকাল সাতটায় সীতাকুণ্ড পৌঁছলাম।
পৌঁছে রেল স্টেশনের পাশে ছাপড়া মসজিদে ফজরের সলাত আদার করে নিলাম।
এরপর হেঁটে সীতাকুণ্ড বাজার এলাম। সেখানে নাস্তা সেড়ে সিএনজি অটোরিক্সায় সীতাকুন্ড পাহাড়ের পাদদেশে এসে নামলাম। রেল স্টেশন থেকে ৪কি.মি. পূর্বে চন্দ্রনাথ পাহাড় অবস্থিত।
শুরু হলো পায়ে হাটা পাহাড়ি পথে যাত্রা। পায়ে হেঁটে ভ্রমনের মজাই আলাদা। চন্দ্রনাথ পাহাড় শ্রেণীভূক্ত ছোট পাহাড় গুলো ব্যাসকুণ্ড থেকে শুরু হয়েছে। সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় যাবার পথে হিন্দুদের বেশকিছু ধর্মীয় স্থাপনা আপনার চোখে পরবে।
এই এলাকা বিভিন্ন ধরনের গাছ, বুনোফুল এবং গুল্মলতায় পরিপূর্ণ। বোটানি এবং জীববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের শিক্ষা প্রকল্পের কাজের জন্য প্রায়ই এখানে আসেন। এখানে আপনি পেয়ারা, সুঁপাড়ি, আম সহ বিভিন্ন ফলের বাগান দেখতে পাবেন। এখানে কিছু নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর মানুষও বসবাস করে, যারা ত্রিপুরা নামে পরিচিত এবং এখানে তাদের কিছু গ্রামও আছে। আপনি যদি পাহাড়ের গভীরে যান তবে পাহাড়ের গায়ে জুমচাষ হচ্ছে দেখতে পাবেন। গভীর পাহাড়ের ভেতরে আপনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা ফুলের বাগানও দেখতে পাবেন। আশেপাশে অনেকগুলো ঝর্ণা আছে তবে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে শুধু একটি মাত্র ঝর্ণা দেখতে পাবেন।
পাহাড়ে ওঠার পথে যেখানে ঝর্ণা, সেখান থেকেই পাহাড়ে উঠার পথ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। ডানদিকের দিকের রাস্তা প্রায় পুরোটাই সিঁড়ি আর বামদিকের রাস্তাটি পুরোটাই পাহাড়ী পথ কিছু ভাঙ্গা সিঁড়ি আছে। বাম দিকের পথ দিয়ে উঠা সহজ আর ডানদিকের সিঁড়ির পথদিয়ে নামা সহজ এমনটাই স্থানীয়রা বললো। তবে আমরা পরীক্ষা করার জন্য শাওন গেলো বামের পাহাড়ী সাধারণ পথে, আর আমি ও আনিস সিড়ি ওয়ালা পথে।
যাই হোক আমার হালকা পাতলা শরীর এবং আমাদের দুইজনের ছোট্ট দল, এগুলো বিবেচনায় রেখে আমরা সিড়ি ওয়ালা এই পথটি নির্বাচন করি পাহাড়ে উঠার। যদিও অধিকাংশ ট্রাভেলারের মতে এই পথে নামা সহজ, উঠা সহজ মাটির রাস্তা দিয়ে। কিন্তু কি আর করা, হাজার হলেও শখে এসেছি সেটা মেটাতে তো হবে। অবশ্য ১৯৯৭ সালে চ্যাংড়া বয়সে একবার উঠেছিলাম এই পাহাড়ে।
তবে কিছু সিড়ি উঠার পর বুঝতে পারলাম মনের বয়স না বাড়লেও শরীরের বয়সটা যথেষ্টই বেড়েছে। আপনি খাড়া উপরের দিকে উঠা মানেই আপনি মধ্যাকর্ষণের বিপরীতে চলছেন, তাই যাত্রাটা হয় প্রচুর কষ্টকর। বৌ যদিও সাথে আসেনি কিন্তু আমাকে কাপড়-চোপড়, পাওয়ার ব্যাংক, চার্জার, ওয়াটার বোটল, মধু এসব দিয়ে এক ট্রাভেল ব্যাগ ধরিয়ে দিয়েছে যার ওজন কম করে হলেও দশ কেজি হবে। সেই ব্যাগ কাধে নিয়ে আমিতো বিশ-ত্রিশ ধাপ উঠে উঠে হাপানী রোগীর মতো হা করে শ্বাস নিচ্ছি। ওদিক থেকে শাওন মাঝে মাঝেই “ও ভাই” বলে ডাক দিয়ে জানান দিচ্ছিলো কতটুকু দূরত্বে আছে। সাথে সাথে আমরাও রিপ্লাই দিচ্ছিলাম।
অবশেষে শেষ দুই বাঁক উঠার আগে এনার্জি Nil হয়ে গেলো। হৃদপিণ্ডের অস্বাভাবিক palpitition থামাতে মিনিট দশেকের বিরতি নিলাম এক টং দোকানে। দু’আ পড়ে পানি খেলাম। একটু পর এনার্জি ফিরে এলে আবার চলতে শুরু করলাম। শেষ ধাপের আগে একটা বটগাছ আছে সেখানে আবার একটু বিরতি দিয়ে দু’রাকাত নফল সলাত আদায় করলাম। অনেকেই অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো হুজুর এই মন্দির এলাকায় করছে টা কি! যাক আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সলাত শেষ করে দ্রুত পাহাড়ের চূড়ায় উঠে গেলাম।
শাওন আগেই উঠে গিয়েছিলো পাশের পাহাড় বেয়ে। আমরা তিনজনে ক্লান্তি এড়ানোর জন্য কচি ডাব খেলাম। এরপর টুকটুক ফটো সেশান চললো স্মৃতি রাখার জন্য।
পাহাড়ের চূড়ায় নির্মল আবহাওয়ায় আধা ঘন্টা কাটিয়ে আমরা আবার নীচে নামতে শুরু করলাম। যারা বলেছিলো নামাটা সহজ তাদের কে খুঁজতেছিলাম ওদের কাঁধে সিন্দবাদের দৈত্যের মতো সওয়ার হয়ে নামতে। নামার সময় দেখি বছর পঞ্চাশোর্ধ এক মহিলা ছেলে, ছেলের বৌ, দুই নাতনি সহ উঠছে, মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য। ভাবলাম, মুসলিম হয়ে সামান্য পাঁচশ মিটার সমতল দূরত্বে মসজিদে যেতে চাই না। অথচ এই বৃদ্ধ মহিলা, শিশু বাচ্চা কি এক অদৃশ্য টানে তর তর করে পাঁচশ মিটার পাহাড় বেয়ে উঠছে।
কাগজ কলমে চন্দ্রনাথ পাহাড় ১১৫২ ফুট উচু বলা হলেও আমার কাছে ১৬-১৭শ ফুট মনে হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে আনুমানিক ২,২০০ (+/-) সিঁড়ি বেয়ে মূল শৃঙ্গে পৌঁছতে।
অবশেষে পাহাড়ের চূড়া থেকে সমতলে নেমে আসতে আসতে দুপুর হয়ে গেলো। পাহাড়ী কচি শশা খেয়ে আবার সিএনজি অটোরিক্সায় ছুটে চললাম পরবর্তী গন্তব্য “বাঁশবাড়িয়া সী বিচ” এ…
নারায়ণগঞ্জ কদম রসূল দরগাহ্
শীতের প্রথম সংক্ষিপ্ত সফরনামা :
নারায়ণগঞ্জ কদম রসূল দরগাহ্
আগেই বলেছিলাম বেশ কিছুদিন যাবত বাসা টু অফিস, অফিস টু বাসা করতে করতে হাপিয়ে উঠেছিলাম।
দিনটি ছিলো বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণায় ১২ই রবিউল আওয়াল।
নারায়ণগঞ্জ শহর ঘুরে আমি আর শাওন চললাম নবীগঞ্জ ঘাটের দিকে। রিক্সায় ঘাটে পৌঁছতে মিনিট পনের লাগলো। ঘাটে পোঁছে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় না উঠে দাড় টানা নৌকা রিজার্ভ করলাম মাত্র তিরিশ টাকায়! ইচ্ছে ছিলো শীতলক্ষ্যার সৌন্দর্য দেখবো নির্মল হাওয়ায়। কিন্তু নদীর পানি এতটাই প্রচন্ড গন্ধ ছিলো যে, নিমিষেই শখ উধাও হয়ে গেলো। নতুন বরের মতো নাকে রুমাল চেপেও গন্ধ আটকাতে পারছিলাম না। মিনিট দশেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম নবীগঞ্জ ঘাটে।
নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে তিন মাইল উত্তরে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ে নবীগঞ্জ। এই নবীগঞ্জেই অবস্থিত কদম রসূল দরগাহ্। কদম রসূল বলতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর পায়ের ছাপ কে বোঝানো হয়েছে। কথিত ভাষ্য অনুযায়ী এখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কদম মোবারকের ছাপ সম্বলিত একটি পাথর রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রের ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ঈসা খাঁর সেনাপতি মাসুম খাঁ কাবুলি একজন আরব বণিকের কাছ থেকে বিশালাকার পায়ের ছাপ বিশিষ্ট এ কালো পাথরটি কিনেছিলেন। পরে তিনি এই দরগাহ্ নির্মাণ করে তাতে পাথরটি স্থাপন করেন । তারপর সুলতান শুজা এই দরগাহ্’র জন্য ৮০ বিঘা জমি দান করেন। সে সময় এই দরগাহ্’র ইমারতটি কেমন ছিল তা জানা যায় না। এর পরে ঈসা খাঁর প্রপৌত্র দেওয়ান মনোয়ার খান এখানে একটি ইমারত তৈরি করেন। কিন্তু সেই ইমারতও কালের গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এর অনেক পরে তৎকালীন ঢাকায় বসবাসকারী কুমিল্লা জেলার টোরা পরগনার জমিদার গোলাম নবী ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে নতুন করে একটি দরগাহ নির্মাণ করেন এবং তাতে পবিত্র পাথরটি স্থাপন করেন। তখন ১ গম্বুজ বিশিষ্ট একটি ইমারত ছিল। এর পরে গোলাম নবীর তৃতীয় পুত্র গোলাম মোহাম্মাদ ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমদিকের দোতলা তোরণটি নির্মাণ করেন।
কদম রসূল দরগাহ্’র সামনে কারুকার্জ করা একটি সুউচ্চ তোরণ রয়েছে। দেখে মনে হবে যেন কোনো মসজিদ বা মাজার। আসলে এটা দরগাহ্’য় প্রবেশের মূল ফটক। ২৫টি সিঁড়ি ডিঙিয়ে প্রবেশ করতে হয় দরগাহ শরিফে।
তোরণ পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই বাম দিকে রয়েছে একটি মাসজিদ। ডান দিকে রয়েছে ১৭টি পাকা কবর। দরগাহ শরিফের খাদেম জানান, কদম রসুল দরগার প্রতিষ্ঠাতা মাসুম খাঁ কাবুলির বংশধরদের কবর এগুলো।
ঠিক মাঝ বরাবর এক গম্বুজ বিশিষ্ট ছোট্ট একটি কক্ষ রয়েছে। যেখানে রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কদম মুবারকের ছাপ সংবলিত কথিত পাথরটি সংরক্ষিত রয়েছে।
দরগাহ্ গেট দিয়ে প্রবেশ করে সরাসরি চলে গেলাম ঐ ছোট্ট কক্ষটিতে যেখানে রাসূলের কথিত কদম মুবারকের ছাপ ওয়ালা পাথরটি আছে। ঢুকতেই দেখি একজন মধ্যবয়সী খাদেম আতর ও গোলাপজল মাখানো পাথরটি হাতে দাড়িয়ে আছেন। লোকজন নজরানার বিনিময়ে পাথর ছুটে হাতে চুমু খাচ্ছেন এবং সেটা ধোয়া পানি নিয়ে যাচ্ছেন। দরগাহ কর্তৃপক্ষ জানান, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কদম মুবারকের ছাপ সম্বলিত কালো পাথরটি দর্শন পেতে এখানে ছুটে আসে। প্রত্যেকেই আসে কোনো না কোনো বাসনা নিয়ে। ভক্ত-আশেকানদের পাথরটি স্পর্শ করে মুখমণ্ডল মাসেহ করতে দেখা যায়। বাসনা পূরণের আশায় পাথর ধোয়া পানি কিংবা গোলাপ জল পান করে অনেকেই।
বারোই রবিউল আওয়াল হওয়ায় ক্ববর, মাজার, দরগাহ্’য় যেই ভীড় থাকে, এখানেও তার ব্যতিক্রম দেখতে পেলাম না। দক্ষিণমুখী বিশাল গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা গেল মাজারের সুপ্রশস- প্রাঙ্গণজুড়ে শত শত নারী পুরুষের সহবস্থান। কেউ বসে, কেউ শুয়ে, কেউ দাঁড়িয়ে, কেউবা আবার আধশোয়া হয়ে মিলাদ পড়ছে। পাশেই বিশাল বিরানির ড্যাগ। মিলাদ শেষে ভক্ত আশেকানদের তবারুক হিসেব দেয়া হবে তা।
আচ্ছা গাজা সিগেরেটে অভ্যস্ত না হলে কি মাজারে অবস্থান করা যায় না নাকি? সালু কাপড়ে একেক বাবার একেক বেশ। কারো বাবরী আছে দাড়ি নেই, কারো দাড়ি আছে বাবরী নেই। তবে সবার যেটা আছে সেটা হল জট। চুল দাড়িতে জট। আবার এর মধ্যে মহিলাও আছে।
আশ্চর্য হলাম না মাজারের ঠিক পাশেই মাসজিদ খালি দেখে! সুবিশাল মাসজিদ। জিজ্ঞেস করে জানলাম দিনরাত সর্বদা হাজার হাজার লোকে মাজার লোকারণ্য থাকলেও নামাজের সময় মাসজিদ থাকে খালি। নামাজের সময় মাত্র চার থেকে পাঁচটা কাতার হয়।
এখানে আগতদের যত ইবাদত, মানত, চাওয়া পাওয়া সবই মাজার কেন্দ্রিক। মজার ব্যপার হলো, মাজারের খাদেমকে পর্যন্ত নামাজের সময় নির্বিকার বসে থাকতে দেখা গেল মাজারে। মসজিদে আল্লাহর দরবারে সিজদাহ্ দেয়ার লোক পাওয়া না গেলেও শতশত নারীপুরুষকে পাওয়া গেলো মৃত মানুষের ক্ববরে (তাদের ভাষায় মাজার) সিজদারত অঅবস্থায়! পাশেই সালু পড়া একদল গাজা টেনে যাচ্ছে আর একদল বাদ্য বাজিয়ে গান গাচ্ছে-
পানিত্ তলে মোম বাত্তি
বাও বাতাসে নিভে না।
বাবার নামে হালকা দিলে
অজু গোসল লাগে না!
মোল্লা মুনশি নমাজ পড়ে
মারেফত ত জানে না!
বাবার নামে হালকা দিলে
সতর ঢাকন লাগে না!
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউ’ন!
আস্তাগফিরুল্লাহ! আল্লাহ্ এসব মানুষের ক্বলব সংশোধনের মাধ্যমে প্রকৃত দ্বীনের হিদায়াত দান করুন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কদম মুবারক (যদিও প্রমাণিত নয়)কে কেন্দ্র করে যে দরগাহ্ গড়ে উঠেছে তাতে এমন শিরকের আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে দেখে নিদারুণ মর্মাহত হলাম। আল্লাহ্ সবচেয়ে সম্মানিত রাসূলের আদর্শ ছিল তাওহীদ আর এখানে তাঁর নামেই চলছে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ভ্রান্ত কর্মকাণ্ড!
আর দেরী করাটা সমীচীন মনে হলো না তাই দ্রুত বেড়িয়ে আসলাম দরগাহ্ প্রাঙ্গণ থেকে।
এভাবেই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে শেষ করতে হলো শীতের প্রথম সংক্ষিপ্ত সফরনামার কদম রসূল দরগাহ্ পর্ব।
দ্বীপান্তরে তিন দিন-৩ চরফ্যাশনের ‘জ্যাকব টাওয়ার’
‘জ্যাকব টাওয়ার’ “JACOB TOWER”
ভোলা’র চরফ্যাশনে নির্মিত হচ্ছে উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার।
স্থানীয়দের কাছে যেটি ‘জ্যাকব টাওয়ার’ নামে পরিচিত।
টাওয়ারটির উচ্চতা ২১৫ ফুট। স্থানীয় সাংসদ এবং পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের উদ্যোগে চরফ্যাশন শহরের খাসমহল মসজিদ ও ফ্যাশন স্কোয়ারের পাশে এ টাওয়ারটি নির্মিত হচ্ছে। টাওয়ারটিতে ক্যাপসুল লিফটও সংযোজন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এতে থাকছে উচ্চ ক্ষমতার বাইনোকুলার, যাতে ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখা যাবে অনায়াসে। ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়ালেই তেঁতুলিয়া নদীর শান্ত জলধারা, পূর্বে মেঘনা নদীর উথাল-পাতাল ঢেউ, দক্ষিণে চর কুকরী-মুকরীসহ বঙ্গোপসাগরের বিরাট অংশ নজরে আসবে।
প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন এ টাওয়ারটি পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করবে বলে আশা করা যায়। টাওয়ার সংলগ্ন স্থানেই পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক বিলাসবহুল রেস্টহাউসও নির্মাণ করা হচ্ছে।
‘জ্যাকব টাওয়ার’ থেকে ভোলা দেখতে যেমন-
দ্বীপান্তরে তিন দিন-২: দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে যাত্রা শুরু
দ্বীপান্তরে তিন দিন
আমাদের এই ট্যুরটা ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর। একের পর এক twist… এক একজন করে ট্যুর ক্যানসেল করছে, শেষে দেখা গেল আমি ছাড়া কেউ নেই। ট্যুর ক্যানসেল করি তো আবার কাউকে পাই। দু’ তিন বার ট্যুর ক্যানসেল করে আবার ডিসাইড করি, না যাবই যাব। ট্রাভেলার আমি ও রফিক ভাই। দু’জন ব্যাগ গুছিয়ে লঞ্চে উঠে গেছি। এমন সময় নাটকের শেষ দৃশ্যে আরেক জন হাজির। অবশেষে নাটকের শেষ দৃশ্যে আমি এবং ট্রাভেলার্স এক্সপ্রস-এর রফিক ভাই ও আরো একজন মোট তিনজন মিলেই যাত্রা শুরু হয় ‘তিন দিনের দীপান্তরে’। কচ্ছপিয়া ঘাটে পরিচয় হয় আরো তিন জন ট্রাভেলারের সাথে। এরপরের গল্পটা আমাদের ৬ জনকে নিয়েই!
আমরা ঘুরেছি চর কুকরি মুকরি, সোনার চর, শীপ চর এবং সর্বশেষ ঢাল চর। এতো বেশি বৈচিত্র্যময় ছিল ট্যুরটা যে নিঃসন্দেহে বলতে পারি বছরের সেরা ট্যুর ছিল এটা। সাগরে পথ হারিয়ে দুঘন্টার পথ সাড়ে তিন ঘন্টায় পৌছা আর সন্ধ্যে বেলা সরু এক খাল ধরে ভুল পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়ে অমানবিক পরিশ্রম করে নৌকা খাল থেকে বের করে আনায় ছিল অ্যাডভেঞ্চারের ষোল কলা পূর্তি। সে গল্পটাই হোক তাহলে ছবিতে ছবিতে…. কারন – “A picture is worth a thousand words.” So, lets start…২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা – ২৬ ডিসেম্বর সকাল, ২০১৬
প্রথম দিন আমরা ছিলাম চর কুকরি মুকরিতে। ২য় দিন সকালে ট্রলার রিজার্ভ করে রওনা হই সোনার চরের দিকে। সোনার চর ঘুরে চলে যাই শীপ চরে। শীপ চর থেকে সমুদ্রে পথ ভুলে দেড় ঘন্টা বেশি সময় লাগিয়ে পৌছাই তাড়ুয়া বীচের কাছে। সেখান থেকে ঢাল চর। ঢাল চরে যাওয়ার পথে আবারও পথ হারিয়ে জনমানবহীন জঙ্গলে ঢুকে পরি আমরা। শেষে দেখি বেরুনোর কোন পথ নেই। সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা হচ্ছে, ওখানকার থেকে অনেক কষ্টে ট্রলার উল্টো ঠেলে নিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে সন্ধা হয়ে যায় এবং ওখানকার ভিতরের দিকে তোলা কোন ছবিই আমাদের কারো মোবাইল ও ক্যামেরায় খুঁজে পাইনি ঢাল চরে পৌঁছার পর। রাতে ঢাল চরে থাকা। সকালে ঢাল চর থেকে আমাদের চিরচেনা গন্তব্য ঢাকার পথে ফিরে আসা। এবার, ছবিতে বাকি গল্প….
সোনার চর: যে দ্বীপে হারিয়ে গিয়েছিলাম ইচ্ছে করেই…
বঙ্গোপসাগরের বুক চিড়ে জেগে ওঠা দীর্ঘ সৈকত সমৃদ্ধ অনিন্দ সুন্দর দ্বীপ “সোনার চর” “The Golden Beach” এ ট্রাভেলার্স এক্সপ্রেস-এর কয়েক যাত্রী…
শীপ চরেও গেছিলাম। জন-মানবহীন ভূতুড়ে দ্বীপ। সাগরের মাঝে! এখান থেকে ফেরার পথে মাঝি পথ হারাই ফেলছিল!!!
আপনারা তো ঘুমে অচেতন… আমি আর মাঝি জেগে ছিলাম… পরে দুই ঘন্টার পথ সাড়ে তিন ঘন্টায়ও শেষ না হওয়ায় সন্দেহ হয় ঘন কুয়াশার কারণে পথ ভুলে গেছে মাঝি… আমার মোবাইলের তিন সিমেই নেটওয়ার্ক মিসিং তাই সাথে থাকা মিনি কম্পাস বের করে মাঝিকে দিক বলে দেই… আর Ariful Rajib কে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ওনার মোবাইলে নেট চালু করে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে আমাদের সঠিক অবস্থান নির্নয় করি।
অবশ্য হারিয়ে যাওয়ার পর রফিক ভাই বলছিল: আকিক ভাই, কি দরকার ছিল দিক ঠিক করার। যাইতাম গা আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে…. যাক, বিপদ ঘুমের মধ্যে কাইট্টা গেছে… টের পাই নাই…. 🙂 জোসস একটা অ্যাডভেঞ্চারাস voyage হয়ে গেল…
মূল লেখা: @Rafiqul Islam
দ্বীপান্তরে তিন দিন (ভোলা)-১
কুকুর-মেকুরের দ্বীপ – The Island of Dogs & Cats.
দ্বীপের রাণী খ্যাত ভোলার অনিন্দ্য সুন্দর এক দ্বীপ হল চর কুকরি মুকরি। শুরু দিকে এ চরে কুকুর আর মেকুরের (বিড়াল) অধিপত্য এতই বেশি ছিল যে এর নামকরন করা হয় চর কুকরি মুকরি। নামটাতে কিছু একটা আছে, ‘গাঢ় মৌন আহবান’ জাতীয় কিছু, নেশার মত টানে। আর সে টানেই এবার গিয়েছিলাম (ডিসেম্বর ‘১৬ তে) চর কুকরি মুকরি। নিঝুম দ্বীপের চেয়ে একটু বেশিই সুন্দর এ দ্বীপটি! গরম তেলে কি জল ঢেলে দিলাম?
ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে শীতের মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ হট কেক (Hot Cake)। মজার ব্যাপার হল নিঝুম দ্বীপের সমস্ত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যই আছে চর কুকরি মুকরিতে! তবে সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে কুকরি মুকরি একটু আলাদা। নিঝুম দ্বীপের মানুষগুলো প্রফেশনাল, এবং পর্যটকদের আনুষাঙ্গিক ব্যাপারগুলো এক্সপেনসিভ। কুকরি মুকরি এদিক থেকে ঢের পিছিয়ে। মানুষগুলো এখনো প্রফেশনাল হতে শিখে নি।
চর কুকরি মুকরিতে অনেকে যেতে চান না আবাসন সংক্রান্ত কারনে। থাকার জায়গা বলতে ইউনিয়ন পরিষদের ডাক বাংলো তাও রুম খালি থাকা সাপেক্ষে। এছাড়া থাকা যায় স্থানীয় কারো বাসাতেও। আমরা থেকে ছিলাম ‘বাবুল মাঝি’র বাড়িতে। যদিও পেয়িং গেস্ট হিসেবে তারপরও কেন জানি মনে হয়েছিল আমরা গাঁয়ে কোন আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি বুঝি।
কুকরি মুকরি থেকে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ‘সোনার চর’, শীপ চর, ঢাল চরের ‘তাড়ুয়া বীচ’ থেকে। সোনার চর যেন সমুদ্রের কোলে প্রকৃতির আর্শীবাদ। শীপ চর সমুদ্রের মাঝে তার অবস্থান জানিয়ে আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে। আর তাড়ুয়া বীচ মায়াকাড়া।
কুকরি মুকরি আর নিঝুম দ্বীপকে বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে একই শ্রেণীতে ফেলে তুলনা করা যায় বিধায় এ দুর্সাহস দেখালাম। এবং আমার চোখে নিঝুমের চেয়ে কুকরি মুকরি ঢের এগিয়ে! সৌন্দর্য বলেন, খরচ বলেন, আথিতেয়তা বলেন, সব দিক থেকে! এবার একটা মজার ইনফো দেই। কুকরিতে বিশাল এক রেস্ট হাউজ নির্মানাধীন। এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভাল।
আপনি চাইলে একাও কুকরি মুকরি থেকে ঘুরে আসতে পারেন। মন ভরে যাবে, প্রমিজ।
এবার আসুন দেখি কিভাবে যাবেন। সদরঘাট থেকে লঞ্চ ফারহান ৫/৬ সন্ধ্যে ৭ টার দিকে ভোলার বেতুয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০ টাকা। ২য় তলার ডেকে সুইটেবল একটা জায়গা নিয়ে বসে যান সকাল অবধি। সকাল ৬ টার দিকে বেতুয়া নামবেন। বেতুয়া থেকে নসিমন বা অটোতে চর ফ্যাশন। ভাড়া ৩০ টাকা (নসিমনে)। এবার চর ফ্যাশন বাস স্টেশনের পাশেই জ্যাকব টাওয়ার। টাওয়ারটা একটু দেখে দ.আইচার বাসে উঠে যান। ভাড়া ৪০ টাকা। আইচাতে নেমে অটোতে করে চর কচ্ছপিয়া ঘাট ১০ টাকা। সকাল ৯ টা এবং ১২ টায় কুকরি মুকরির ট্রলার যায়। আপনি ১২ টার ট্রলারটাই পাবেন। উঠে যান আর চোখ কচলে নিন। সামনেই সহ্যের বাইরে সৌন্দর্য আপনার অপেক্ষায়। প্রায় ঘন্টাদেড়েকের ট্রলার ভ্রমণে সরু খাল ধরে আপনি এক সময় পৌছে যাবেন কুকরির খালে ভাড়া ৪০ টাকা। একটু হেঁটেই বাজারে যান। বাজারে হোটেল আছে থাকার, আছে পরিষদের ডাক বাংলো। আছে বাবুল মাঝির একটা ডেডিকেটেড রুম আর মিষ্টি ব্যবহার। উনাকে ফোন দিন আর আথিতেয়তা নিন। খাবার দাবার আর থাকা তাঁর বাড়িতেই করুন। দ্বীপে ঘুরুন বাকি বেলা। পরদিন ট্রলার রিজার্ভ করে সোনার চর, শীপ চর, তাড়ুয়া বীচ ঘুরুন। সারা দিনে ২৫০০ টাকার মত দিলেই হবে। আপনাকে তিন দিনের ট্যুর প্লান করেই কুকরিতে যেতে হবে। ঢাকা থেকে আগেই ফোনে সব না করে অন স্পটে করুন। আগে থেকে কন্ট্রাক করলে খরচ বেশি চাইবে। আগে যান, তারপর দেখুন দ্বীপের মানুষগুলো কত্তো ভালো। ইনফ্যাক্ট, পুরো ভোলার মানুষগুলোকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।
#বাবুল মাঝির নাম্বারঃ 01745432237
#হাসেম মাঝিঃ 01767494294
বাবুল মাঝির ঘরটা ভালো। আরো আপগ্রেড করছে। টয়লেটটা মোটামুটি বাট চলবে।
চাইলে আমাদের ট্রিপটা একটু দেখে নিতে পারেন। অনেক ইনফরমেটিভ।
কুকরি মুকরি:
https://www.facebook.com/groups/648420725312136/permalink/755119864642221/
সোনার চর, শীপ চর, ঢাল চর:
https://www.facebook.com/groups/648420725312136/permalink/756087581212116/
অতি দীর্ঘ আলোচনার পরিশেষে এটাই বলা যায়, আপনার জন্য চমৎকার একটা ট্রিপ অপেক্ষা করছে। ৬-৮ জনের একটা টিম হলে ২,৫০০+ টাকাতেই ঘুরতে আসতে পারেন একদম নিখাদ সৌন্দর্যের মাঝে।
রুট প্ল্যানঃ ঢাকা-বেতুয়া-চর ফ্যাশন-দ.আইচা-কচ্ছপিয়া ঘাট- চর কুকরি মুকরি।
So, The Island of Dogs & Cats are waiting for your footprints… 👣👣
লেখা: @Rafiqul Islam
নাপিত্তাছড়া অভিযান…
নাপিত্তাছড়া অভিযান…
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ভোর ৫.০০ টায় ফজর সলাতের পর খিলক্ষেত, রামপুরা, বাসাবো আর সাইনবোর্ড থেকে আমি (আকিক রাসেল), হামিদুল হক, শাওন, আনিস, জাহিদ আর সুদীপ বণিক মিলে মাইক্রোবাসে চেপে বসলাম।
গন্তব্য নাপিত্তাছড়া আর খৈয়াছড়া ঝর্ণা, মিরসরাই, চট্টগ্রাম।
যাওয়ার পথে ৮.৩০-এ হোটেল Highway Inn এ সকালের নাস্তা সারলাম। ৩০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু হলো।
বেলা ১০.৩০ মিনিট নাগাদ প্রবেশ করলাম মিরসরাই উপজেলায়। ১০.৫০ নাগাদ বড় তাকিয়া বাজারে পৌঁছে গেলাম। মিরেরসরাই ক্রস করার পর বরতাকিয়া বাজার। বরতাকিয়া ক্রস করার পর রাস্তার ডানে একটি সুন্দর মসজিদ দেখতে পাওয়া যায়, আসলে এটিই ন দুয়ারি বাজার। রাস্তার বাম পাশে বাজারের ভিতরে প্রবেশ করে হাটা শুরু করলেই আপনি পেয়ে যাবেন নাপিত্তাছড়ায় যাওয়ার পথ।
ইট বিছানো কিছুটা পথ হাঁটার পরই চোঁখে পড়বে সবুজে ঘেরা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলা মেঠো পথ। পথের মাঝে দেখা হয়ে গেল কয়েকটি ভ্রমণপিয়াসী গ্রুপের ভাইয়া ও আপ্পিদের সাথে। তাদের সাথে তাদের কিছুটা অভিজ্ঞতা ও রোমাঞ্চকর মুহূর্ত শেয়ার করে আবারো এগিয়ে চললাম। মোটামুটি মিনিট পনের হাঁটার পর দেখা মিললো রেল লাইনের। রেল লাইনের পাশেই অর্ডারী হোটেল (অর্থাৎ এডভান্স টাকা দিলে আপনার জন্য চাহিদা মাফিক রান্না করে রাখবে) দেখতে পেলাম। ভাত, মাছ, মুরগীর গোস্ত, গরুর গোস্ত, ভর্তা, ডাল অনেক কিছুই সুলভ মূল্যে খাওয়া যায় এখানে।
রেললাইন পেরোলেই পাহাড়ে ঢোকার মূল পথ। আমরা রেললাইনে কিছুক্ষণ ফটোসেশন করে নিলাম। এরপর রেললাইন পেরিয়ে আবার হাঁটা শুরু, লোকালয় শেষ হয়ে আসছিলো আর আমাদের সাথে বন-পাহাড়ের দূরুত্ব কমে আসছিলো। সবাই একজন গাইড নেয়ার প্রয়োজন অনুভব করলেও আমি ছিলাম ব্যতিক্রম, আমার যুক্তি ছিলো- অচেনা পথে এগিয়ে চলাটাই একটা অ্যাডভেঞ্চার। এ পথে আমরা সবাই ছিলাম একেবারেই আনকোরা! মেঠো পথ ছেড়ে ঢুকে পরেছি পাহাড়ী ঝিরিপথে। মাঝে মধ্যে দু-এক একজন লোকাল মানুষ পেয়ে জিজ্ঞেস করতে করতে এগিয়ে চললাম। যদিও নিশ্চিত ছিলাম এই ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে গেলে ঝর্ণার দেখা পাবোই পাবো!
পাওয়া তথ্য মতে এই ঝিরিপথে মোট ঝর্ণা আছে মোট ৩ টি। কুপিকাটাখুম, বাঘবিয়ানি এবং বান্দরাখুম।
চলতি পথে প্রথম বাঁধা আসলো মোটামুটি উঁচু জলপ্রপাতের এক পাহাড় বেয়ে উপরে উঠা নিয়ে। আমাদের ছয়জনের দু’জন ক্ষান্ত দিলেন পথ চলায়। পাহাড় ডিঙ্গিয়ে বাকী চারজন উপরে উঠেই দেখা পেলাম প্রথম ঝর্ণার। নাম তার কুপিকাটা খুম। এর সৌন্দর্য মোটামুটি। এর শুরুতে চমৎকার কিছু সিঁড়িসমৃদ্ধ ধাপ আছে।
কুপিকাটাখুম এ গোসল করে আবার হাঁটা পথে এগিয়ে যাবো, এমন সময় আমাদের সাথের আরেকজন ক্ষান্ত দিলো পথচলায়। কি আর করার, তিন জনেই এগিয়ে যাচ্ছি। চলতে গিয়ে অবশ্য কয়েকটা বিপদজ্জনক বাঁকের মুখোমুখি হলাম। এ পথে আরও পেলাম পিচ্ছিল সব বিশাল বিশাল পাথর। একসময় ঝিরিপথ দু’দিকে ভাগ হয়ে গেলো! আমরা মহা দুশ্চিন্তায় পরে গেলাম। এবার বুঝি হারিয়ে গেলাম…!
যাক আল্লাহ্’র রহমতে দু’তিন জনের এক গ্রুপকে আসতে দেখলাম তারা বললো ডান দিকে একটা ঝর্ণা আছে পাঁচ মিনিটের পথ (নাম লতে পারলো না)। যাক বুকে সাহস ফিরে পেলাম। ঝর্ণায় আসার পথে কিছু পাহাড়ী আমলকী কিনে এনেছিলাম সেটাই এতক্ষণ চিবুচ্ছিলাম। এবার ঝর্ণার পানি পান করলাম ইচ্ছেমত আর আমলকীর কারণে স্বাদে তা অমৃতের মতো লাগলো।
আমরা আবার হাঁটা শুরু করলাম…। সত্যিই মিনিট পাঁচেক পর এক অপরুপ ঝর্ণার দেখা মিললো। এর নাম বান্দরা খুম। যদিও ঝর্ণায় ভরা যৌবণের দেখা পেলাম না অর্থাৎ পানি ছিলো তুলনামূলক কম তবুও নতুনত্বের স্বাদ মন্দ লাগেনি। বান্দরা খুমে আমার সঙ্গী দু’জন মনের সুখে গোসল করে ক্লান্ত শরীর চাঙ্গা করে নিলো।
এখানে পৌঁছুতে আমাদের তিনজনের সময় লেগেছে প্রায় ৪৫ মিনিট এর মতো।
ফেরার পথে যে জায়গায় পথ হারিয়ে ছিলাম সেই দুই ভাগ হওয়া ঝিরিপথের সংযোগ স্থলে পৌঁছলাম। আমরা গিয়েছিলাম ডানের ঝর্ণায় এবার রওনা দিলাম বামের পথে তৃতীয় ঝর্ণার সন্ধানে। মিনিট দশেক চলার পর দেখা মিললো তৃতীয় ঝর্ণা বাঘবিয়ানি’র। এটিতে পৌঁছতে যতটা কষ্ট হয়েছে সৌন্দর্য ততটা না হওয়ায় কষ্ট আরো বেড়ে গেলো। যাই হোক কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফিরে চললাম ন দুয়ারি বাজারের উদ্দেশ্যে।
মাঝ পথে রেল লাইনের পাশে হোটেল থেকে তিনজনে পাহাড়ী ডাব খেয়ে নিলাম। আমাদের গ্রুপের বাকী তিনজন যে চক্করে পড়ে রয়েছে সে কাহিনী আজ গোপনই থাক।
একটা কথা না বললেই নয়, তা হলো- আমার দেখা এ পর্যন্ত সব থেকে সুন্দর ট্রেইল হলো নাপিত্তাছড়া।
আমরা এগিয়ে চলছি এদিনের পরের অভিযানে… খৈয়াছড়ার উদ্দেশ্যে….
ঘুরে এলাম রূপালী ইলিশের ভূমি চাঁদপুর
একেই বলে রিযিক! তিন দিন (২২-২৪অক্টোবর) ছুটি পাওয়ায় ২১ তারিখ রাতে যাওয়ার কথা ছিলো সিলেট,কিন্তু প্রাইভেট কারটি হঠাৎ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পরদিন সকালে যাচ্ছি চাঁদপুর। যথারীতি বৌকে বললাম আমি অফিস কলিগ হামিদুল হক আর কয়েক জন মিলে চাঁদপুর মোহনা দেখতে যাচ্ছি। হঠাৎ মাঝখান থেকে ছয় বছরের মেয়ে সুনবুল বলে উঠলো- আব্বু, তুমি মোহনাকে দেখতে কোথায় যাবে? আমি বললাম-“কেন, তুমি মোহনা চেন নাকি?, বলতো “মোহনা কাকে বলে?”
ও ঝটপট উত্তর দিলো- “কেন তুমি জান না, আমার স্কুলের এক বন্ধুর বড় বোনের নাম মোহনা।”
শুনে আমি আর বৌ তো হেসে একাকার। আমাদের হাসতে দেখে ও কিছুটা লজ্জিত হয়ে বললো, তোমরা হাসছো কেন, আমি কি ভুল বলেছি?
আমি বললাম, মামুনি আমি তোমার বন্ধুর বড় বোন মোহনার কথা বলছি না, আমি বলছি নদীর মোহনার কথা, আর এ মোহনা হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে একাধিক নদী একসাথে মিশে সমুদ্রের পানে এগিয়ে যায়। আমি যাবো বাংলাদেশের এমন এক জায়গায় যেখানে তিনটি বড় নদী একসাথে মিশেছে। জায়গাটা হচ্ছে চাঁদপুর। চাঁদপুরের মোহনায় পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া এই তিনটি নদী একসাথে মিশেছে।
ঠিক হলো সকাল ৭টায় সদরঘাট থেকে লঞ্চ এ করে চাঁদপুর যাবো, লঞ্চ থেকে নেমে চাঁদপুর মোহনায় ঘুরে বেড়াবো ছবি তুলবো, কিছুক্ষণ পরে নদীর পাড় এর কোন লোকাল রেস্টুরেন্ট এ তাজা ইলিশ ভাজা দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে আবার লঞ্চ এ উঠে ঢাকায় চলে আসবো। সন্ধ্যা ৬.৩০ এর মাঝে ঢাকা ব্যাক করতে পারবো।
প্রশ্ন হলো চাঁদপুর যখন যাবোই, তাহলে সেটি লঞ্চেই কেন যেতে হবে? আসলে এই ট্যুরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটি হচ্ছে এর যাত্রাপথ। দক্ষিণাঞ্চলের কিছু জেলার মানুষ ছাড়া শহুরে মানুষের আসলে খুব বেশী নদীপথে চলাচলের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। তবে বিভিন্ন সময়ের লঞ্চডুবির কিছু ঘটনা এবং ঈদের আগের খবরে সদরঘাটে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখে হয়তো লঞ্চ জার্নির ব্যাপারে কারো কারো ধারণা একটু নেতিবাচক হয়ে গেছে। তাই পারতপক্ষে তারা সদরঘাটে পা ভেড়ানোর কথা চিন্তাও করে না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সদরঘাটে এখন এমন কিছু লঞ্চ রয়েছে,যেগুলোর আধুনিকতা আর বিলাসিতা দেখে আপনার চোখ কপাল ছুঁয়ে যাবে এবং সেগুলোতে চলাচল করাও বেশ নিরাপদ। তবে লঞ্চে ওঠার আগে শুধু একটু খোঁজ-খবর নিয়ে নেবেন, লঞ্চটি কেমন সে ব্যাপারে। আর জেনে নেবেন, দুর্ঘটনার সময় জীবন বাঁচানোর জন্য সাহায্যকারী উপাদানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কি না। তবে চাঁদপুরে যাওয়ার জন্য আমার মতে সেরা দুটি লঞ্চ হচ্ছে রফরফ-২ ও ময়ূর-৭। এদের বাইরের ও ভেতরের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে এবং আপনি ভুলেই যাবেন যে এটি বাংলাদেশের কোনো লঞ্চ! যদি চেয়ারে বসে যেতে চান, তাহলে ভাড়া লাগবে ১৩০ টাকা। আর সঙ্গে এসির বাতাস যোগ করতে চাইলে গুণে নিন ২২০ টাকা। কেবিনের ভেতর আরাম করেও যেতে পারেন চাইলে। আরও আছে নরমাল সিঙ্গেল কেবিন, সিঙ্গেল কেবিন এসি, নরমাল ডাবল কেবিন, ফ্যামিলি কেবিন ও ভিআইপি কেবিন। ময়ূর-৭ ঢাকা থেকে ছাড়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে, চাঁদপুর থেকে রাত ১২টা ১৫ মিনিটে। রফরফ-২ ঢাকা থেকে রাত ১২টায় ও চাঁদপুর থেকে দুপুর ১২টায় ছাড়ে। এ ছাড়া আরো কিছু ভালো মানের লঞ্চ আছে। যেমন—এমভি তাকওয়া, এমভি সোনার তরী, এমভি মেঘনা রানী, এমভি বোগদাদীয়া, এমভি ঈগল, এমভি আল বোরাক, এমভি তুতুল ইত্যাদি। এগুলোর মানও খারাপ নয়। ভাড়াও প্রায় একই রকম। তবে ডেক এ গেলে ১০০টাকা। একটু কমবেশি হতেই পারে।
যথারীতি ফজরের সালাত আদায় শেষে আমি আর গিয়াস ভাই প্রাইভেট কারে সদরঘাট পৌঁছলাম। হামিদ আর সোহেল ভাইও মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আমাদের সাথে মিট করলো। চারজনে মিলে গেটপাস নিয়ে মূল লঞ্চঘাটে ঢুঁকলাম। সকাল ৭টা ১০মিনিট। অপেক্ষার সময় নেই। দেখলাম এমভি সোনার তরী-২ ছেড়ে যাবে ৭-২০মিনিটে। অপেক্ষা না করে উঠে পড়লাম এমভি সোনার তরী-২ তে। চাঁদপুরের এমপি দিপুমনি একই লঞ্চে ভ্রমণ করায় ১০মিনিট লেট করে ৭-৩০মিনিটে লঞ্চ সদরঘাট ছেড়ে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। ডিসিশন পাক্কা ছিল আমরা ডেকে ভ্রমণ করবো। সুতরাং সরাসরি ছাদে উঠে গেলাম। উঠেই সেলফি তুলে FB তে স্ট্যাটাস দিলাম “টাটকা ইলিশের ঘ্রাণ নিতে চাঁদপুর যাচ্ছি…”।
এরপর সাইড রেলিং এ হেলান দিয়ে নৌপথের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে শুরু করলাম। ৩০মিনিট পর হামিদ সোহেল ভাই আর গিয়াস ভাই ক্যান্টিন থেকে নাস্তা খেয়ে আসলো।মাঝে মাঝেই বালু বোঝাই ট্রলার দেখতে পাচ্ছিলাম। নদীর দৃশ্য দেখার ফাঁকে ফাঁকে ছবি তুলছিলাম মোবাইলের ক্যামেরা ব্যবহার করে। হঠাৎ মুন্সিগঞ্জের কাছাকাছি আসতেই লঞ্চের গতি কমে আসলো আর একটি ট্রলার এসে লঞ্চের গা ঘেসে চলতে লাগলো, দেখলাম কিছু মানুষ মিালপত্র সমেত ট্রলার থেকে লঞ্চে উঠে এলো। যাত্রী উঠা শেষে লঞ্চ আবার পূর্বের ন্যায় চলতে শুরু করলো।
আমাদের লঞ্চ জার্নি শুরু হয়েছিল বুড়িগঙ্গা নদী থেকে। আস্তে আস্তে ধলেশ্বরী আর শীতলক্ষ্যা পাশ কাটিয়ে লঞ্চ গিয়ে উঠলো মেঘনায়। সবচেয়ে মুগ্ধ করলো যে ব্যাপারটা তা হলো, প্রতিটি নদীরই নিজ নিজ আলাদা রূপ বৈচিত্র আছে। যেটি হয়তো আগে কখনো খেয়াল করিনি। তাই যারা নৌ ভ্রমণে বের হবেন তাদের জন্য উপদেশ- কেবিনে কাঁথা মুড়ি দিয়ে না ঘুমিয়ে বা তাস পিটিয়ে সময় ক্ষেপন না করে উঠে যান ছাদে বা রেলিং এর ধারে। দেখবেন চাঁদপুর পথের চারটি ঘণ্টা অসাধারণ কাটবে নদী, পানি, নৌকা, দূরের জনপদ আর জেলেদের মাছ ধরা দেখে।
মেঘনায় লঞ্চ প্রবেশ করতেই দেখলাম ছোট ছোট জেলে নৌকা পানির ঢেউয়ে দুলুদুলু দুলছে, মনে হচ্ছে এই তো বুঝি উল্টে গেল, কেউ বা ধরেছে জাল টেনে, শক্ত হাতে হাল টেনে ধরেছে তাঁর সঙ্গী, কেউ বা নৌকায় বসে গুনে নিচ্ছে ধরা পড়া মাছের সংখ্যা, কারো মুখের কোণে লেগে আছে হাসি, ওদিকে নৌকায় জীবন্ত ইলিশের ছটফটানি! এককথায় এক অপরূপ জীবনছবি। শহুরে জীবনের মায়া কাটিয়ে হয়তো কোনো জেলের ঘরে আশ্রয় নিতে চাইবে আপনার মন। থাক সে কথা!
ভ্রমণের মাঝে খুঁজে ফিরলাম দক্ষিণ বঙ্গের লঞ্চের বিখ্যাত খাবার চিড়া-নাড়িকেল। কিন্তু পেলাম না! কি আর করা। অবশেষে চানাচুর ওয়ালা ধরে নিয়ে আসলো গিয়াস ভাই। আমিও আমার পেয়াজ, মরিচ, শশা আর মশলা মাখা চানাচুর প্রেমের কিঞ্চিত শেয়ার করলাম তাদের সাথে একাই ৫০টাকার খেয়ে। ওনারাও কম গেলেন না… সর্ব সাকুল্যে চার জনের বিল আসলো ১৫০টাকা।
নদীর দু’ধারের ইটের ভাটাগুলো নদী ও প্রকৃতির শত্রুদের কথা মনে করিয়ে দিলো। রাজনৈতিক নেতাদের প্ররোচনায় একদিকে চলছে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন অপরদিকে ভুমিদস্যুরা নদী দখল করে গড়ে তুলছে স্থাপনা আর ইট ভাটা।
বেলা ১১-৩০ মিনিটে চাঁদপুর টার্মিনাল পৌঁছুলেও আমরা নামলাম না। না নেমে অধিক ভ্রমণের লোভে চললাম ইচলী। ইচলি যাওয়ার পথে একটু পরেই চোঁখে পড়লো পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া এই তিন নদীর মোহনা। যা শহরের মোলহেড থেকেও দেখা যায়। পার্কের মতো এ জায়গা বড় স্টেশন নামেও পরিচিত। দূর থেকে সহজেই পানির রং দেখে নদীগুলোকে চেনা যায়। পার্কে ঘুরে আসতে চাইলে চাঁদপুর টার্মিনালে আপনাকে নামতে হবে।
মিনিট দশেক যাত্রা বিরতি দিয়ে আমাদের লঞ্চ ইচলির দিকে যাত্রা শুরু করলো। মাঝে মাঝে প্লাস্টিকের ড্রামে জাল বেঁধে দেশীয় প্রযুক্তিতে নদীতে মাছ চাষ প্রকল্প চোঁখে পড়লো। ১২-৩০মিনিটে আমরা ইচলি পৌঁছলাম। অতঃপর নৌকায় নদী পার হয়ে ইজি বাইক যোগে চাঁদপুর বড় স্টেশন পৌঁছলাম। এরপর একটু হেঁটে মাছ ঘাট। এখানে ইলিশ মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং জেলেরা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার পর এখানেই নিয়ে আসে। মাছঘাট পুরাতন রেল ষ্টেশনের ঠিক বিপরীত পাশেই। এটা মূলতঃ ইলিশের পাইকারী বাজার। বাজারের আড়তজুড়ে ইলিশ আর ইলিশ। ট্রলার থেকে ঝাঁকায় ঝাঁকায় মাছ আসছে। সেগুলো মেঝেতে থরে থরে বরফ দিয়ে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে, তারপর হচ্ছে ‘ডাক’। ডাক মানে নিলামে পাইকারেরা মাছ কিনে নিয়ে আবার বরফকুচি দিয়ে বড় বড় ককশীটের বাক্সে মাছগুলো রাখেন। এরপর ছোট বা বড় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন সারা দেশে, এমনকি বিদেশেও।আড়তে ইলিশের দাম নির্ভর করে এর ওজন আর কয়টা কিনবেন তার ওপর। ৬০০ থেকে শুরু করে ২২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত দাম চাইলেন বিক্রেতারা। ওজন ৬০০গ্রাম থেকে ১কেজি ৮৫০গ্রাম পর্যন্ত। এখানে হাজারো ইলিশের ভিড়ে কেনাকাটা করতে গেলে মুলোমুলিটা ভালোই করতে হবে। দামে সুবিধা না হওয়ায় ইলিশের রাজ্য থেকে আমরা চলে আসলাম বড় স্টেশন মোড়ের এক হোটেলে। উদ্দেশ্য ইলিশ ভাজা দিয়ে সাদা ভাত পাওয়া খাব। ইলিশের ভুমিতে আসবো আর ইলিশ খাবো না তাই কি হয়! আমরা হোটেলে ঢুকেই সরাসরি রান্না ঘরের দিকে চললাম। এরপর দুটো কাঁচা মাছ পছন্দ করে তা প্রতি টুকরো ১০০টাকা চুক্তিতে ভেজে দিতে বললাম। মাছ সুন্দর ভাবে কেটে টুকরা করে হলুদ-মরিচের গুঁড়া মাখিয়ে বড় কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজা হলো সেগুলো। সঙ্গে শুকনা মরিচ ভাজা দিয়ে আমাদের সামনে পরিবেশন করা হলো।খুব মজা করে চেটে পুটে খেলাম। খেলাম, এবার মহান মালিক আল্লাহ’র দরবারে শুকরিয়া আদায়ের পালা। মসজিদ খুঁজতে লাগলাম এবং একটু হেঁটেই মসজিদ পেয়ে গেলাম। মসজিদে মূল জামাআত শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা চারজনে জামাআতে কসর যুহরের কসর সালাত আদায় করলাম।এরপর নদীর পাড় ধরে হাঁটতে লাগলাম গন্তব্য চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনাল।অনেক মানুষ নদীতে গোসল করছে। দেখে নামতে ইচ্ছে হলেও এক্সট্রা কাপড়-চোপড় না থাকায় দেখেই স্বাদ মেটালাম।২.৩০মিনিটে ঘাটে পৌঁছলাম। লঞ্চ সেই সোনার তরী-২। ছাড়বে ২.৪৫মিনিটে। লঞ্চ ঘাটে টাটকা ইলিশ দেখে হামিদের আর তর সইলো না। ৬০০-৭০০গ্রাম ওজনের ১০টি মাছ ৩৭০০টাকায় রফা হলো। সাথে টাটকা কেজি দেড়েক চিংড়িও কিনলো। দুটো ব্যাগে বরফ কুচি দিয়ে মাছ ভরে দিলেন মাঝি।
লঞ্চ সময় মতোই ছাড়লো। পড়ন্ত বেলায় সূর্য আর মেঘের লুকোচুরি দেখতে দেখতে ঢাকার পথে চললাম। লঞ্চের ছাদে আসর সালাত আদায় করলাম। সদরঘাট আসতে আসতে আবারও মাগরিব পড়তে হলো লঞ্চের ছাদে। ৭টা নাগাদ লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনালে পৌঁছলো। এরপর সবাই যার যার মতো ফিরে চললাম আপন আলয়ে…
বি.দ্র.: যারা চাঁদপুর শহর ঘুরে দেখতে চান, তারা চাঁদপুরে নেমে ঘণ্টা খানেক সময় হাতে রেখে একটু ঘুরে আসতে পারেন আশপাশ। দেখার মতো জায়গার অভাব নেই। তবে চাঁদপুরে এসে ইলিশ না খেয়ে বাড়ি ফেরার মতো বোকামি করবেন না। ভাগ্যে থাকলে হয়তো রুপালি ইলিশের স্বাদ নিতে পারবেন। লঞ্চঘাটের আশপাশেই বেশ কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। চাইলে কালীবাড়ি মোড়ে গিয়েও খেতে পারেন। খাওয়া শেষ করে ডাকাতিয়া নদীর তীর ধরে মোহনার দিকে হাঁটা শুরু করেন। চাঁদপুর শহর থেকে মোলহেডে যাওয়ার দুইটা উপায় আছে। শহরের ভিতর দিয়ে সেতু পার হয়ে যাওয়া যায়, আবার ইলিশ ঘাট থেকে নৌকা করেও পাড়ি দেয়া যায়। সারি বেঁধে অনেক নৌকা রাখা আছে। যার যেটা সুবিধা। তীব্র স্রোতের কারণে মোহনার কাছাকাছি নদীভাঙন একটা সময় খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। যদিও সিমেন্টের ব্লক ফেলে এই ভাঙন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তিন নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনের মুখে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্লক ফেলে যতটুকু রক্ষা করা গেছে তার অংশবিশেষকেই চাঁদপুর মোহনা বা মোলহেড বলে ডাকা হয়। স্থানীয়রা একে ঠোডা বলেও ডেকে থাকে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রণাঙ্গনে শহীদ হওয়া বীর যোদ্ধাদের স্মরণে মোলহেডের প্রবেশ মুখে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ রক্তধারা। দূর থেকে পর্যটকদের মানসপটে এর সৌন্দর্য অবলোকনে পিপাসা ধরায়। পর্যটকরা ঘুরে ঘুরে শিল্পীর কারুকার্য খচিত সৃষ্টিকর্ম প্রত্যক্ষ করে থাকে। ঠোডা থেকে পদ্মা-মেঘনা নদীর মিলনস্থল খুবই কাছে থেকেই দেখা যায়। তাই এই জায়গা একটা বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। এখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে পদ্মার চর ঘুরে আসা যায় জনপ্রতি ২০ টাকা। রিজার্ভ নৌকা ২০০-২৫০ টাকা।
ঢাকা হতে রাতে (১২.৩০) রওনা দিয়ে ভোরে (৪.৩০)চাঁদপুর পৌঁছে আবার বিকেলে (২.৪৫) ঢাকা রওনা দিতে চাইলে মাঝে চাঁদপুর বড় স্টেশন মোহনা (পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া), রক্তকরবী চত্বর, ইলিশ চত্বর, অঙ্গীকার স্বাধীনতা স্তম্ভ দেখে নিতে পারেন। আর একটু সময় হাতে থাকলে দেখতে পারেন লোহাগড়ের মঠ। তবে সেটি দেখতে চাইলে চাঁদপুর ঘাটে না নেমে এর পরে ইচলিতে নামুন। সেখানে নেমে সিএনজি একটি ভাড়া করে চলে যান লোহাগড়া মঠ দেখতে। যদি খুব ভোরে যেতে পারেন, তাহলে অসাধারণ লাগবে। উঁচু তিনটি মঠের ওপরে রয়েছে পাখির বাসা। ভোরে এদের বাড়ি ছাড়ার দৃশ্য পরিবেশটিকে আরো অসাধারণ করে তোলে। পাশের জলাভূমিতেও দেখা যাবে নাম-না-জানা আরো অনেক পাখি। সিএনজি অটোরিক্সা ভাড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মতো লাগবে।
আর যদি ঢাকা হতে সকালে (৭.৩০) রওনা দিয়ে আবার রাতের (১২.৩০) লঞ্চে ঢাকা ফিরে আসতে চান তবে সে জার্নিটাও খারাপ হবে না। আর যদি জোছনা থাকে,তাহলে তো কথাই নেই। তবে শীতকালে আবার কুয়াশার জন্য কিছুই দেখতে পারবেন না। তাই রাতে ভ্রমণের জন্য পরিষ্কার আকাশ বেছে নিন। ঠান্ডা বাতাসের মাঝে চাঁদের আলো দেখতে দেখতে কীভাবে সময় কেটে যাবে, টেরই পাবেন না! আপনার ট্যুরটি সাজান মনের মতো করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, রাতে ও দিনে দুই সময়েই লঞ্চের জার্নি খুব রোমাঞ্চকর। তাই এমনভাবে সফরসূচি তৈরি করুন, যাতে রাত-দিন মিলিয়ে প্রকৃতি-রূপের ষোলো আনা পকেটে পুরেই বাড়ি ফেরা যায়।