ঘুরে এলাম রূপালী ইলিশের ভূমি চাঁদপুর

একেই বলে রিযিক! তিন দিন (২২-২৪অক্টোবর) ছুটি পাওয়ায় ২১ তারিখ রাতে যাওয়ার কথা ছিলো সিলেট,কিন্তু প্রাইভেট কারটি হঠাৎ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পরদিন সকালে যাচ্ছি চাঁদপুর। যথারীতি বৌকে বললাম আমি অফিস কলিগ হামিদুল হক আর কয়েক জন মিলে চাঁদপুর মোহনা দেখতে যাচ্ছি। হঠাৎ মাঝখান থেকে ছয় বছরের মেয়ে সুনবুল বলে উঠলো- আব্বু, তুমি মোহনাকে দেখতে কোথায় যাবে? আমি বললাম-“কেন, তুমি মোহনা চেন নাকি?, বলতো “মোহনা কাকে বলে?”

ও ঝটপট উত্তর দিলো- “কেন তুমি জান না, আমার স্কুলের এক বন্ধুর বড় বোনের নাম মোহনা।”

শুনে আমি আর বৌ তো হেসে একাকার। আমাদের হাসতে দেখে ও কিছুটা লজ্জিত হয়ে বললো, তোমরা হাসছো কেন, আমি কি ভুল বলেছি?

আমি বললাম, মামুনি আমি তোমার বন্ধুর বড় বোন মোহনার কথা বলছি না, আমি বলছি নদীর মোহনার কথা, আর এ মোহনা হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে একাধিক নদী একসাথে মিশে সমুদ্রের পানে এগিয়ে যায়। আমি যাবো বাংলাদেশের এমন এক জায়গায় যেখানে তিনটি বড় নদী একসাথে মিশেছে। জায়গাটা হচ্ছে চাঁদপুর। চাঁদপুরের মোহনায় পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া এই তিনটি নদী একসাথে মিশেছে।

ঠিক হলো সকাল ৭টায় সদরঘাট থেকে লঞ্চ এ করে চাঁদপুর যাবো, লঞ্চ থেকে নেমে চাঁদপুর মোহনায় ঘুরে বেড়াবো ছবি তুলবো, কিছুক্ষণ পরে নদীর পাড় এর কোন লোকাল রেস্টুরেন্ট এ তাজা ইলিশ ভাজা দিয়ে দুপুরের খাবার সেরে আবার লঞ্চ এ উঠে ঢাকায় চলে আসবো। সন্ধ্যা ৬.৩০ এর মাঝে ঢাকা ব্যাক করতে পারবো।

প্রশ্ন হলো চাঁদপুর যখন যাবোই, তাহলে সেটি লঞ্চেই কেন যেতে হবে? আসলে এই ট্যুরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটি হচ্ছে এর যাত্রাপথ। দক্ষিণাঞ্চলের কিছু জেলার মানুষ ছাড়া শহুরে মানুষের আসলে খুব বেশী নদীপথে চলাচলের তেমন অভিজ্ঞতা নেই। তবে বিভিন্ন সময়ের লঞ্চডুবির কিছু ঘটনা এবং ঈদের আগের খবরে সদরঘাটে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখে হয়তো লঞ্চ জার্নির ব্যাপারে কারো কারো ধারণা একটু নেতিবাচক হয়ে গেছে। তাই পারতপক্ষে তারা সদরঘাটে পা ভেড়ানোর কথা চিন্তাও করে না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, সদরঘাটে এখন এমন কিছু লঞ্চ রয়েছে,যেগুলোর আধুনিকতা আর বিলাসিতা দেখে আপনার চোখ কপাল ছুঁয়ে যাবে এবং সেগুলোতে চলাচল করাও বেশ নিরাপদ। তবে লঞ্চে ওঠার আগে শুধু একটু খোঁজ-খবর নিয়ে নেবেন, লঞ্চটি কেমন সে ব্যাপারে। আর জেনে নেবেন, দুর্ঘটনার সময় জীবন বাঁচানোর জন্য সাহায্যকারী উপাদানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কি না। তবে চাঁদপুরে যাওয়ার জন্য আমার মতে সেরা দুটি লঞ্চ হচ্ছে রফরফ-২ ও ময়ূর-৭। এদের বাইরের ও ভেতরের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে এবং আপনি ভুলেই যাবেন যে এটি বাংলাদেশের কোনো লঞ্চ! যদি চেয়ারে বসে যেতে চান, তাহলে ভাড়া লাগবে ১৩০ টাকা। আর সঙ্গে এসির বাতাস যোগ করতে চাইলে গুণে নিন ২২০ টাকা। কেবিনের ভেতর আরাম করেও যেতে পারেন চাইলে। আরও আছে নরমাল সিঙ্গেল কেবিন, সিঙ্গেল কেবিন এসি, নরমাল ডাবল কেবিন, ফ্যামিলি কেবিন ও ভিআইপি কেবিন। ময়ূর-৭ ঢাকা থেকে ছাড়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে, চাঁদপুর থেকে রাত ১২টা ১৫ মিনিটে। রফরফ-২ ঢাকা থেকে রাত ১২টায় ও চাঁদপুর থেকে দুপুর ১২টায় ছাড়ে। এ ছাড়া আরো কিছু ভালো মানের লঞ্চ আছে। যেমন—এমভি তাকওয়া, এমভি সোনার তরী, এমভি মেঘনা রানী, এমভি বোগদাদীয়া, এমভি ঈগল, এমভি আল বোরাক, এমভি তুতুল ইত্যাদি। এগুলোর মানও খারাপ নয়। ভাড়াও প্রায় একই রকম। তবে ডেক এ গেলে ১০০টাকা। একটু কমবেশি হতেই পারে।

যথারীতি ফজরের সালাত আদায় শেষে আমি আর গিয়াস ভাই প্রাইভেট কারে সদরঘাট পৌঁছলাম। হামিদ আর সোহেল ভাইও মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আমাদের সাথে মিট করলো। চারজনে মিলে গেটপাস নিয়ে মূল লঞ্চঘাটে ঢুঁকলাম। সকাল ৭টা ১০মিনিট। অপেক্ষার সময় নেই। দেখলাম এমভি সোনার তরী-২ ছেড়ে যাবে ৭-২০মিনিটে। অপেক্ষা না করে উঠে পড়লাম এমভি সোনার তরী-২ তে। চাঁদপুরের এমপি দিপুমনি একই লঞ্চে ভ্রমণ করায় ১০মিনিট লেট করে ৭-৩০মিনিটে লঞ্চ সদরঘাট ছেড়ে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। ডিসিশন পাক্কা ছিল আমরা ডেকে ভ্রমণ করবো। সুতরাং সরাসরি ছাদে উঠে গেলাম। উঠেই সেলফি তুলে FB তে স্ট্যাটাস দিলাম “টাটকা ইলিশের ঘ্রাণ নিতে চাঁদপুর যাচ্ছি…”।

এরপর সাইড রেলিং এ হেলান দিয়ে নৌপথের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে শুরু করলাম। ৩০মিনিট পর হামিদ সোহেল ভাই আর গিয়াস ভাই ক্যান্টিন থেকে নাস্তা খেয়ে আসলো।মাঝে মাঝেই বালু বোঝাই ট্রলার দেখতে পাচ্ছিলাম। নদীর দৃশ্য দেখার ফাঁকে ফাঁকে ছবি তুলছিলাম মোবাইলের ক্যামেরা ব্যবহার করে। হঠাৎ মুন্সিগঞ্জের কাছাকাছি আসতেই লঞ্চের গতি কমে আসলো আর একটি ট্রলার এসে লঞ্চের গা ঘেসে চলতে লাগলো, দেখলাম কিছু মানুষ মিালপত্র সমেত ট্রলার থেকে লঞ্চে উঠে এলো। যাত্রী উঠা শেষে লঞ্চ আবার পূর্বের ন্যায় চলতে শুরু করলো।

আমাদের লঞ্চ জার্নি শুরু হয়েছিল বুড়িগঙ্গা নদী থেকে। আস্তে আস্তে ধলেশ্বরী আর শীতলক্ষ্যা পাশ কাটিয়ে লঞ্চ গিয়ে উঠলো মেঘনায়। সবচেয়ে মুগ্ধ করলো যে ব্যাপারটা তা হলো, প্রতিটি নদীরই নিজ নিজ আলাদা রূপ বৈচিত্র আছে। যেটি হয়তো আগে কখনো খেয়াল করিনি। তাই যারা নৌ ভ্রমণে বের হবেন তাদের জন্য উপদেশ- কেবিনে কাঁথা মুড়ি দিয়ে না ঘুমিয়ে বা তাস পিটিয়ে সময় ক্ষেপন না করে উঠে যান ছাদে বা রেলিং এর ধারে। দেখবেন চাঁদপুর পথের চারটি ঘণ্টা অসাধারণ কাটবে নদী, পানি, নৌকা, দূরের জনপদ আর জেলেদের মাছ ধরা দেখে।

মেঘনায় লঞ্চ প্রবেশ করতেই দেখলাম ছোট ছোট জেলে নৌকা পানির ঢেউয়ে দুলুদুলু দুলছে, মনে হচ্ছে এই তো বুঝি উল্টে গেল, কেউ বা ধরেছে জাল টেনে, শক্ত হাতে হাল টেনে ধরেছে তাঁর সঙ্গী, কেউ বা নৌকায় বসে গুনে নিচ্ছে ধরা পড়া মাছের সংখ্যা, কারো মুখের কোণে লেগে আছে হাসি, ওদিকে নৌকায় জীবন্ত ইলিশের ছটফটানি! এককথায় এক অপরূপ জীবনছবি। শহুরে জীবনের মায়া কাটিয়ে হয়তো কোনো জেলের ঘরে আশ্রয় নিতে চাইবে আপনার মন। থাক সে কথা!

ভ্রমণের মাঝে খুঁজে ফিরলাম দক্ষিণ বঙ্গের লঞ্চের বিখ্যাত খাবার চিড়া-নাড়িকেল। কিন্তু পেলাম না! কি আর করা। অবশেষে চানাচুর ওয়ালা ধরে নিয়ে আসলো গিয়াস ভাই। আমিও আমার পেয়াজ, মরিচ, শশা আর মশলা মাখা চানাচুর প্রেমের কিঞ্চিত শেয়ার করলাম তাদের সাথে একাই ৫০টাকার খেয়ে। ওনারাও কম গেলেন না… সর্ব সাকুল্যে চার জনের বিল আসলো ১৫০টাকা।

নদীর দু’ধারের ইটের ভাটাগুলো নদী ও প্রকৃতির শত্রুদের কথা মনে করিয়ে দিলো। রাজনৈতিক নেতাদের প্ররোচনায় একদিকে চলছে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন অপরদিকে ভুমিদস্যুরা নদী দখল করে গড়ে তুলছে স্থাপনা আর ইট ভাটা।

বেলা ১১-৩০ মিনিটে চাঁদপুর টার্মিনাল পৌঁছুলেও আমরা নামলাম না। না নেমে অধিক ভ্রমণের লোভে চললাম ইচলী। ইচলি যাওয়ার পথে একটু পরেই চোঁখে পড়লো পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া এই তিন নদীর মোহনা। যা শহরের মোলহেড থেকেও দেখা যায়। পার্কের মতো এ জায়গা বড় স্টেশন নামেও পরিচিত। দূর থেকে সহজেই পানির রং দেখে নদীগুলোকে চেনা যায়। পার্কে ঘুরে আসতে চাইলে চাঁদপুর টার্মিনালে আপনাকে নামতে হবে।

মিনিট দশেক যাত্রা বিরতি দিয়ে আমাদের লঞ্চ ইচলির দিকে যাত্রা শুরু করলো। মাঝে মাঝে প্লাস্টিকের ড্রামে জাল বেঁধে দেশীয় প্রযুক্তিতে নদীতে মাছ চাষ প্রকল্প চোঁখে পড়লো। ১২-৩০মিনিটে আমরা ইচলি পৌঁছলাম। অতঃপর নৌকায় নদী পার হয়ে ইজি বাইক যোগে চাঁদপুর বড় স্টেশন পৌঁছলাম। এরপর একটু হেঁটে মাছ ঘাট। এখানে ইলিশ মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং জেলেরা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার পর এখানেই নিয়ে আসে। মাছঘাট পুরাতন রেল ষ্টেশনের ঠিক বিপরীত পাশেই। এটা মূলতঃ ইলিশের পাইকারী বাজার। বাজারের আড়তজুড়ে ইলিশ আর ইলিশ। ট্রলার থেকে ঝাঁকায় ঝাঁকায় মাছ আসছে। সেগুলো মেঝেতে থরে থরে বরফ দিয়ে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে, তারপর হচ্ছে ‘ডাক’। ডাক মানে নিলামে পাইকারেরা মাছ কিনে নিয়ে আবার বরফকুচি দিয়ে বড় বড় ককশীটের বাক্সে মাছগুলো রাখেন। এরপর ছোট বা বড় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন সারা দেশে, এমনকি বিদেশেও।আড়তে ইলিশের দাম নির্ভর করে এর ওজন আর কয়টা কিনবেন তার ওপর। ৬০০ থেকে শুরু করে ২২০০ টাকা কেজি পর্যন্ত দাম চাইলেন বিক্রেতারা। ওজন ৬০০গ্রাম থেকে ১কেজি ৮৫০গ্রাম পর্যন্ত। এখানে হাজারো ইলিশের ভিড়ে কেনাকাটা করতে গেলে মুলোমুলিটা ভালোই করতে হবে। দামে সুবিধা না হওয়ায় ইলিশের রাজ্য থেকে আমরা চলে আসলাম বড় স্টেশন মোড়ের এক হোটেলে। উদ্দেশ্য ইলিশ ভাজা দিয়ে সাদা ভাত পাওয়া খাব। ইলিশের ভুমিতে আসবো আর ইলিশ খাবো না তাই কি হয়! আমরা হোটেলে ঢুকেই সরাসরি রান্না ঘরের দিকে চললাম। এরপর দুটো কাঁচা মাছ পছন্দ করে তা প্রতি টুকরো ১০০টাকা চুক্তিতে ভেজে দিতে বললাম। মাছ সুন্দর ভাবে কেটে টুকরা করে হলুদ-মরিচের গুঁড়া মাখিয়ে বড় কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজা হলো সেগুলো। সঙ্গে শুকনা মরিচ ভাজা দিয়ে আমাদের সামনে পরিবেশন করা হলো।খুব মজা করে চেটে পুটে খেলাম। খেলাম, এবার মহান মালিক আল্লাহ’র দরবারে শুকরিয়া আদায়ের পালা। মসজিদ খুঁজতে লাগলাম এবং একটু হেঁটেই মসজিদ পেয়ে গেলাম। মসজিদে মূল জামাআত শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা চারজনে জামাআতে কসর যুহরের কসর সালাত আদায় করলাম।এরপর নদীর পাড় ধরে হাঁটতে লাগলাম গন্তব্য চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনাল।অনেক মানুষ নদীতে গোসল করছে। দেখে নামতে ইচ্ছে হলেও এক্সট্রা কাপড়-চোপড় না থাকায় দেখেই স্বাদ মেটালাম।২.৩০মিনিটে ঘাটে পৌঁছলাম। লঞ্চ সেই সোনার তরী-২। ছাড়বে ২.৪৫মিনিটে। লঞ্চ ঘাটে টাটকা ইলিশ দেখে হামিদের আর তর সইলো না। ৬০০-৭০০গ্রাম ওজনের ১০টি মাছ ৩৭০০টাকায় রফা হলো। সাথে টাটকা কেজি দেড়েক চিংড়িও কিনলো। দুটো ব্যাগে বরফ কুচি দিয়ে মাছ ভরে দিলেন মাঝি।

লঞ্চ সময় মতোই ছাড়লো। পড়ন্ত বেলায় সূর্য আর মেঘের লুকোচুরি দেখতে দেখতে ঢাকার পথে চললাম। লঞ্চের ছাদে আসর সালাত আদায় করলাম। সদরঘাট আসতে আসতে আবারও মাগরিব পড়তে হলো লঞ্চের ছাদে। ৭টা নাগাদ লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনালে পৌঁছলো। এরপর সবাই যার যার মতো ফিরে চললাম আপন আলয়ে…

বি.দ্র.: যারা চাঁদপুর শহর ঘুরে দেখতে চান, তারা চাঁদপুরে নেমে ঘণ্টা খানেক সময় হাতে রেখে একটু ঘুরে আসতে পারেন আশপাশ। দেখার মতো জায়গার অভাব নেই। তবে চাঁদপুরে এসে ইলিশ না খেয়ে বাড়ি ফেরার মতো বোকামি করবেন না। ভাগ্যে থাকলে হয়তো রুপালি ইলিশের স্বাদ নিতে পারবেন। লঞ্চঘাটের আশপাশেই বেশ কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। চাইলে কালীবাড়ি মোড়ে গিয়েও খেতে পারেন। খাওয়া শেষ করে ডাকাতিয়া নদীর তীর ধরে মোহনার দিকে হাঁটা শুরু করেন। চাঁদপুর শহর থেকে মোলহেডে যাওয়ার দুইটা উপায় আছে। শহরের ভিতর দিয়ে সেতু পার হয়ে যাওয়া যায়, আবার ইলিশ ঘাট থেকে নৌকা করেও পাড়ি দেয়া যায়। সারি বেঁধে অনেক নৌকা রাখা আছে। যার যেটা সুবিধা। তীব্র স্রোতের কারণে মোহনার কাছাকাছি নদীভাঙন একটা সময় খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। যদিও সিমেন্টের ব্লক ফেলে এই ভাঙন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তিন নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনের মুখে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্লক ফেলে যতটুকু রক্ষা করা গেছে তার অংশবিশেষকেই চাঁদপুর মোহনা বা মোলহেড বলে ডাকা হয়। স্থানীয়রা একে ঠোডা বলেও ডেকে থাকে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রণাঙ্গনে শহীদ হওয়া বীর যোদ্ধাদের স্মরণে মোলহেডের প্রবেশ মুখে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ রক্তধারা। দূর থেকে পর্যটকদের মানসপটে এর সৌন্দর্য অবলোকনে পিপাসা ধরায়। পর্যটকরা ঘুরে ঘুরে শিল্পীর কারুকার্য খচিত সৃষ্টিকর্ম প্রত্যক্ষ করে থাকে। ঠোডা থেকে পদ্মা-মেঘনা নদীর মিলনস্থল খুবই কাছে থেকেই দেখা যায়। তাই এই জায়গা একটা বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। এখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে পদ্মার চর ঘুরে আসা যায় জনপ্রতি ২০ টাকা। রিজার্ভ নৌকা ২০০-২৫০ টাকা।

ঢাকা হতে রাতে (১২.৩০) রওনা দিয়ে ভোরে (৪.৩০)চাঁদপুর পৌঁছে আবার বিকেলে (২.৪৫) ঢাকা রওনা দিতে চাইলে মাঝে চাঁদপুর বড় স্টেশন মোহনা (পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া), রক্তকরবী চত্বর, ইলিশ চত্বর, অঙ্গীকার স্বাধীনতা স্তম্ভ দেখে নিতে পারেন। আর একটু সময় হাতে থাকলে দেখতে পারেন লোহাগড়ের মঠ। তবে সেটি দেখতে চাইলে চাঁদপুর ঘাটে না নেমে এর পরে ইচলিতে নামুন। সেখানে নেমে সিএনজি একটি ভাড়া করে চলে যান লোহাগড়া মঠ দেখতে। যদি খুব ভোরে যেতে পারেন, তাহলে অসাধারণ লাগবে। উঁচু তিনটি মঠের ওপরে রয়েছে পাখির বাসা। ভোরে এদের বাড়ি ছাড়ার দৃশ্য পরিবেশটিকে আরো অসাধারণ করে তোলে। পাশের জলাভূমিতেও দেখা যাবে নাম-না-জানা আরো অনেক পাখি। সিএনজি অটোরিক্সা ভাড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মতো লাগবে।

আর যদি ঢাকা হতে সকালে (৭.৩০) রওনা দিয়ে আবার রাতের (১২.৩০) লঞ্চে ঢাকা ফিরে আসতে চান তবে সে জার্নিটাও খারাপ হবে না। আর যদি জোছনা থাকে,তাহলে তো কথাই নেই। তবে শীতকালে আবার কুয়াশার জন্য কিছুই দেখতে পারবেন না। তাই রাতে ভ্রমণের জন্য পরিষ্কার আকাশ বেছে নিন। ঠান্ডা বাতাসের মাঝে চাঁদের আলো দেখতে দেখতে কীভাবে সময় কেটে যাবে, টেরই পাবেন না! আপনার ট্যুরটি সাজান মনের মতো করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, রাতে ও দিনে দুই সময়েই লঞ্চের জার্নি খুব রোমাঞ্চকর। তাই এমনভাবে সফরসূচি তৈরি করুন, যাতে রাত-দিন মিলিয়ে প্রকৃতি-রূপের ষোলো আনা পকেটে পুরেই বাড়ি ফেরা যায়।

20151022_072144 20151022_072444 20151022_084101 20151022_093823  20151022_113437 20151022_113516 20151022_113537 20151022_104854

vlcsnap-2015-10-25-12h17m18s835

vlcsnap-2015-10-25-12h17m27s827

vlcsnap-2015-10-25-12h08m39s767

RoktoDharaUntitled-1

20151022_11535720151022_11540620151022_11551120151022_115512 20151022_122822 20151022_122857 20151022_131357 20151022_141550 20151022_141708 20151022_152152 20151022_152546 20151022_152622 20151022_152625 20151022_152823 20151022_153630 20151022_153657 20151022_153823 20151022_154518 20151022_162538 20151022_162709 20151022_162719 20151022_162817 20151022_162958 20151022_163020 20151022_163039 20151022_164503 20151022_164522 20151022_164727 20151022_164935 20151022_165108 20151022_165229 20151022_165743 20151022_165920 20151022_165931  20151022_1627015 chadpur sky

20151022_17530620151022_17535320151022_180246

About Akik Russel-আকিক রাসেল

একজন মানুষ। একজন অনুগত মুসলিম। আল্লাহর দুনিয়ার প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসি।

Posted on অক্টোবর 26, 2015, in ভ্রমণ and tagged , , , , . Bookmark the permalink. ১ টি মন্তব্য.

  1. সাইফুল্লাহ খালেদ

    খুবই চমৎকার বর্ণনা। অসাধারণ সব ছবি। সব দেখে আমারও তর সইছে না। তবে মোহনায় নদীগুলোর একত্র হওয়ার স্পষ্ট ছবি দেখলে আরো ভালো লাগতো।

    Like

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান