Monthly Archives: নভেম্বর 2017

দ্বীপান্তরে তিন দিন-৩ চরফ্যাশনের ‘জ্যাকব টাওয়ার’

‘জ্যাকব টাওয়ার’ “JACOB TOWER”

ভোলা’র চরফ্যাশনে নির্মিত হচ্ছে উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার।

স্থানীয়দের কাছে যেটি ‘জ্যাকব টাওয়ার’ নামে পরিচিত।

টাওয়ারটির উচ্চতা ২১৫ ফুট। স্থানীয় সাংসদ এবং পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের উদ্যোগে চরফ্যাশন শহরের খাসমহল মসজিদ ও ফ্যাশন স্কোয়ারের পাশে এ টাওয়ারটি নির্মিত হচ্ছে। টাওয়ারটিতে ক্যাপসুল লিফটও সংযোজন করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এতে থাকছে উচ্চ ক্ষমতার বাইনোকুলার, যাতে ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখা যাবে অনায়াসে। ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়ালেই তেঁতুলিয়া নদীর শান্ত জলধারা, পূর্বে মেঘনা নদীর উথাল-পাতাল ঢেউ, দক্ষিণে চর কুকরী-মুকরীসহ বঙ্গোপসাগরের বিরাট অংশ নজরে আসবে।

প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ তলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন এ টাওয়ারটি পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করবে বলে আশা করা যায়। টাওয়ার সংলগ্ন স্থানেই পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক বিলাসবহুল রেস্টহাউসও নির্মাণ করা হচ্ছে।

‘জ্যাকব টাওয়ার’ থেকে ভোলা দেখতে যেমন-

দ্বীপান্তরে তিন দিন-২: দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে যাত্রা শুরু

দ্বীপান্তরে তিন দিন

আমাদের এই ট্যুরটা ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর। একের পর এক twist… এক একজন করে ট্যুর ক্যানসেল করছে, শেষে দেখা গেল আমি ছাড়া কেউ নেই। ট্যুর ক্যানসেল করি তো আবার কাউকে পাই। দু’ তিন বার ট্যুর ক্যানসেল করে আবার ডিসাইড করি, না যাবই যাব। ট্রাভেলার আমি ও রফিক ভাই। দু’জন ব্যাগ গুছিয়ে লঞ্চে উঠে গেছি। এমন সময় নাটকের শেষ দৃশ্যে আরেক জন হাজির। অবশেষে নাটকের শেষ দৃশ্যে আমি এবং ট্রাভেলার্স এক্সপ্রস-এর রফিক ভাই ও আরো একজন মোট তিনজন মিলেই যাত্রা শুরু হয় ‘তিন দিনের দীপান্তরে’। কচ্ছপিয়া ঘাটে পরিচয় হয় আরো তিন জন ট্রাভেলারের সাথে। এরপরের গল্পটা আমাদের ৬ জনকে নিয়েই!

আমরা ঘুরেছি চর কুকরি মুকরি, সোনার চর, শীপ চর এবং সর্বশেষ ঢাল চর। এতো বেশি বৈচিত্র্যময় ছিল ট্যুরটা যে নিঃসন্দেহে বলতে পারি বছরের সেরা ট্যুর ছিল এটা। সাগরে পথ হারিয়ে দুঘন্টার পথ সাড়ে তিন ঘন্টায় পৌছা আর সন্ধ্যে বেলা সরু এক খাল ধরে ভুল পথে অনেক দূর এগিয়ে গিয়ে অমানবিক পরিশ্রম করে নৌকা খাল থেকে বের করে আনায় ছিল অ্যাডভেঞ্চারের ষোল কলা পূর্তি। সে গল্পটাই হোক তাহলে ছবিতে ছবিতে…. কারন – “A picture is worth a thousand words.” So, lets start…২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা – ২৬ ডিসেম্বর সকাল, ২০১৬

প্রথম দিন আমরা ছিলাম চর কুকরি মুকরিতে। ২য় দিন সকালে ট্রলার রিজার্ভ করে রওনা হই সোনার চরের দিকে। সোনার চর ঘুরে চলে যাই শীপ চরে। শীপ চর থেকে সমুদ্রে পথ ভুলে দেড় ঘন্টা বেশি সময় লাগিয়ে পৌছাই তাড়ুয়া বীচের কাছে। সেখান থেকে ঢাল চর। ঢাল চরে যাওয়ার পথে আবারও পথ হারিয়ে জনমানবহীন জঙ্গলে ঢুকে পরি আমরা। শেষে দেখি বেরুনোর কোন পথ নেই। সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা হচ্ছে, ওখানকার থেকে অনেক কষ্টে ট্রলার উল্টো ঠেলে নিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে সন্ধা হয়ে যায় এবং ওখানকার ভিতরের দিকে তোলা কোন ছবিই আমাদের কারো মোবাইল ও ক্যামেরায় খুঁজে পাইনি ঢাল চরে পৌঁছার পর। রাতে ঢাল চরে থাকা। সকালে ঢাল চর থেকে আমাদের চিরচেনা গন্তব্য ঢাকার পথে ফিরে আসা। এবার, ছবিতে বাকি গল্প….

সোনার চর: যে দ্বীপে হারিয়ে গিয়েছিলাম ইচ্ছে করেই…

বঙ্গোপসাগরের বুক চিড়ে জেগে ওঠা দীর্ঘ সৈকত সমৃদ্ধ অনিন্দ সুন্দর দ্বীপ “সোনার চর” “The Golden Beach” এ ট্রাভেলার্স এক্সপ্রেস-এর কয়েক যাত্রী…

শীপ চরেও গেছিলাম। জন-মানবহীন ভূতুড়ে দ্বীপ। সাগরের মাঝে! এখান থেকে ফেরার পথে মাঝি পথ হারাই ফেলছিল!!!

আপনারা তো ঘুমে অচেতন… আমি আর মাঝি জেগে ছিলাম… পরে দুই ঘন্টার পথ সাড়ে তিন ঘন্টায়ও শেষ না হওয়ায় সন্দেহ হয় ঘন কুয়াশার কারণে পথ ভুলে গেছে মাঝি… আমার মোবাইলের তিন সিমেই নেটওয়ার্ক মিসিং তাই সাথে থাকা মিনি কম্পাস বের করে মাঝিকে দিক বলে দেই… আর  Ariful Rajib কে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ওনার মোবাইলে নেট চালু করে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে আমাদের সঠিক অবস্থান নির্নয় করি।

অবশ্য হারিয়ে যাওয়ার পর রফিক ভাই বলছিল: আকিক ভাই, কি দরকার ছিল দিক ঠিক করার। যাইতাম গা আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে…. যাক, বিপদ ঘুমের মধ্যে কাইট্টা গেছে… টের পাই নাই…. 🙂 জোসস একটা অ্যাডভেঞ্চারাস voyage হয়ে গেল…

 

মূল লেখা: @Rafiqul Islam

দ্বীপান্তরে তিন দিন (ভোলা)-১

কুকুর-মেকুরের দ্বীপ – The Island of Dogs & Cats.

দ্বীপের রাণী খ্যাত ভোলার অনিন্দ্য সুন্দর এক দ্বীপ হল চর কুকরি মুকরি। শুরু দিকে এ চরে কুকুর আর মেকুরের (বিড়াল) অধিপত্য এতই বেশি ছিল যে এর নামকরন করা হয় চর কুকরি মুকরি। নামটাতে কিছু একটা আছে, ‘গাঢ় মৌন আহবান’ জাতীয় কিছু, নেশার মত টানে। আর সে টানেই এবার গিয়েছিলাম (ডিসেম্বর ‘১৬ তে) চর কুকরি মুকরি। নিঝুম দ্বীপের চেয়ে একটু বেশিই সুন্দর এ দ্বীপটি! গরম তেলে কি জল ঢেলে দিলাম?

ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে শীতের মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ হট কেক (Hot Cake)। মজার ব্যাপার হল নিঝুম দ্বীপের সমস্ত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যই আছে চর কুকরি মুকরিতে! তবে সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে কুকরি মুকরি একটু আলাদা। নিঝুম দ্বীপের মানুষগুলো প্রফেশনাল, এবং পর্যটকদের আনুষাঙ্গিক ব্যাপারগুলো এক্সপেনসিভ। কুকরি মুকরি এদিক থেকে ঢের পিছিয়ে। মানুষগুলো এখনো প্রফেশনাল হতে শিখে নি।

চর কুকরি মুকরিতে অনেকে যেতে চান না আবাসন সংক্রান্ত কারনে। থাকার জায়গা বলতে ইউনিয়ন পরিষদের ডাক বাংলো তাও রুম খালি থাকা সাপেক্ষে। এছাড়া থাকা যায় স্থানীয় কারো বাসাতেও। আমরা থেকে ছিলাম ‘বাবুল মাঝি’র বাড়িতে। যদিও পেয়িং গেস্ট হিসেবে তারপরও কেন জানি মনে হয়েছিল আমরা গাঁয়ে কোন আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি বুঝি।

কুকরি মুকরি থেকে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ‘সোনার চর’, শীপ চর, ঢাল চরের ‘তাড়ুয়া বীচ’ থেকে। সোনার চর যেন সমুদ্রের কোলে প্রকৃতির আর্শীবাদ। শীপ চর সমুদ্রের মাঝে তার অবস্থান জানিয়ে আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে। আর তাড়ুয়া বীচ মায়াকাড়া।

কুকরি মুকরি আর নিঝুম দ্বীপকে বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে একই শ্রেণীতে ফেলে তুলনা করা যায় বিধায় এ দুর্সাহস দেখালাম। এবং আমার চোখে নিঝুমের চেয়ে কুকরি মুকরি ঢের এগিয়ে! সৌন্দর্য বলেন, খরচ বলেন, আথিতেয়তা বলেন, সব দিক থেকে! এবার একটা মজার ইনফো দেই। কুকরিতে বিশাল এক রেস্ট হাউজ নির্মানাধীন। এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভাল।

আপনি চাইলে একাও কুকরি মুকরি থেকে ঘুরে আসতে পারেন। মন ভরে যাবে, প্রমিজ।

এবার আসুন দেখি কিভাবে যাবেন। সদরঘাট থেকে লঞ্চ ফারহান ৫/৬ সন্ধ্যে ৭ টার দিকে ভোলার বেতুয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০ টাকা। ২য় তলার ডেকে সুইটেবল একটা জায়গা নিয়ে বসে যান সকাল অবধি। সকাল ৬ টার দিকে বেতুয়া নামবেন। বেতুয়া থেকে নসিমন বা অটোতে চর ফ্যাশন। ভাড়া ৩০ টাকা (নসিমনে)। এবার চর ফ্যাশন বাস স্টেশনের পাশেই জ্যাকব টাওয়ার। টাওয়ারটা একটু দেখে দ.আইচার বাসে উঠে যান। ভাড়া ৪০ টাকা। আইচাতে নেমে অটোতে করে চর কচ্ছপিয়া ঘাট ১০ টাকা। সকাল ৯ টা এবং ১২ টায় কুকরি মুকরির ট্রলার যায়। আপনি ১২ টার ট্রলারটাই পাবেন। উঠে যান আর চোখ কচলে নিন। সামনেই সহ্যের বাইরে সৌন্দর্য আপনার অপেক্ষায়। প্রায় ঘন্টাদেড়েকের ট্রলার ভ্রমণে সরু খাল ধরে আপনি এক সময় পৌছে যাবেন কুকরির খালে ভাড়া ৪০ টাকা। একটু হেঁটেই বাজারে যান। বাজারে হোটেল আছে থাকার, আছে পরিষদের ডাক বাংলো। আছে বাবুল মাঝির একটা ডেডিকেটেড রুম আর মিষ্টি ব্যবহার। উনাকে ফোন দিন আর আথিতেয়তা নিন। খাবার দাবার আর থাকা তাঁর বাড়িতেই করুন। দ্বীপে ঘুরুন বাকি বেলা। পরদিন ট্রলার রিজার্ভ করে সোনার চর, শীপ চর, তাড়ুয়া বীচ ঘুরুন। সারা দিনে ২৫০০ টাকার মত দিলেই হবে। আপনাকে তিন দিনের ট্যুর প্লান করেই কুকরিতে যেতে হবে। ঢাকা থেকে আগেই ফোনে সব না করে অন স্পটে করুন। আগে থেকে কন্ট্রাক করলে খরচ বেশি চাইবে। আগে যান, তারপর দেখুন দ্বীপের মানুষগুলো কত্তো ভালো। ইনফ্যাক্ট, পুরো ভোলার মানুষগুলোকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।

#বাবুল মাঝির নাম্বারঃ 01745432237
#হাসেম মাঝিঃ 01767494294

বাবুল মাঝির ঘরটা ভালো। আরো আপগ্রেড করছে। টয়লেটটা মোটামুটি বাট চলবে।

চাইলে আমাদের ট্রিপটা একটু দেখে নিতে পারেন। অনেক ইনফরমেটিভ।
কুকরি মুকরি:

 https://www.facebook.com/groups/648420725312136/permalink/755119864642221/
সোনার চর, শীপ চর, ঢাল চর:

 https://www.facebook.com/groups/648420725312136/permalink/756087581212116/

অতি দীর্ঘ আলোচনার পরিশেষে এটাই বলা যায়, আপনার জন্য চমৎকার একটা ট্রিপ অপেক্ষা করছে। ৬-৮ জনের একটা টিম হলে ২,৫০০+ টাকাতেই ঘুরতে আসতে পারেন একদম নিখাদ সৌন্দর্যের মাঝে।

রুট প্ল্যানঃ ঢাকা-বেতুয়া-চর ফ্যাশন-দ.আইচা-কচ্ছপিয়া ঘাট- চর কুকরি মুকরি।

So, The Island of Dogs & Cats are waiting for your footprints… 👣👣

লেখা: @Rafiqul Islam

15978063_1239684139448272_2520180250763034672_n

The man of golden beachFBTravellars Express