দ্বীপান্তরে তিন দিন (ভোলা)-১
কুকুর-মেকুরের দ্বীপ – The Island of Dogs & Cats.
দ্বীপের রাণী খ্যাত ভোলার অনিন্দ্য সুন্দর এক দ্বীপ হল চর কুকরি মুকরি। শুরু দিকে এ চরে কুকুর আর মেকুরের (বিড়াল) অধিপত্য এতই বেশি ছিল যে এর নামকরন করা হয় চর কুকরি মুকরি। নামটাতে কিছু একটা আছে, ‘গাঢ় মৌন আহবান’ জাতীয় কিছু, নেশার মত টানে। আর সে টানেই এবার গিয়েছিলাম (ডিসেম্বর ‘১৬ তে) চর কুকরি মুকরি। নিঝুম দ্বীপের চেয়ে একটু বেশিই সুন্দর এ দ্বীপটি! গরম তেলে কি জল ঢেলে দিলাম?
ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে শীতের মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ হট কেক (Hot Cake)। মজার ব্যাপার হল নিঝুম দ্বীপের সমস্ত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যই আছে চর কুকরি মুকরিতে! তবে সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে কুকরি মুকরি একটু আলাদা। নিঝুম দ্বীপের মানুষগুলো প্রফেশনাল, এবং পর্যটকদের আনুষাঙ্গিক ব্যাপারগুলো এক্সপেনসিভ। কুকরি মুকরি এদিক থেকে ঢের পিছিয়ে। মানুষগুলো এখনো প্রফেশনাল হতে শিখে নি।
চর কুকরি মুকরিতে অনেকে যেতে চান না আবাসন সংক্রান্ত কারনে। থাকার জায়গা বলতে ইউনিয়ন পরিষদের ডাক বাংলো তাও রুম খালি থাকা সাপেক্ষে। এছাড়া থাকা যায় স্থানীয় কারো বাসাতেও। আমরা থেকে ছিলাম ‘বাবুল মাঝি’র বাড়িতে। যদিও পেয়িং গেস্ট হিসেবে তারপরও কেন জানি মনে হয়েছিল আমরা গাঁয়ে কোন আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি বুঝি।
কুকরি মুকরি থেকে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ‘সোনার চর’, শীপ চর, ঢাল চরের ‘তাড়ুয়া বীচ’ থেকে। সোনার চর যেন সমুদ্রের কোলে প্রকৃতির আর্শীবাদ। শীপ চর সমুদ্রের মাঝে তার অবস্থান জানিয়ে আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে। আর তাড়ুয়া বীচ মায়াকাড়া।
কুকরি মুকরি আর নিঝুম দ্বীপকে বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে একই শ্রেণীতে ফেলে তুলনা করা যায় বিধায় এ দুর্সাহস দেখালাম। এবং আমার চোখে নিঝুমের চেয়ে কুকরি মুকরি ঢের এগিয়ে! সৌন্দর্য বলেন, খরচ বলেন, আথিতেয়তা বলেন, সব দিক থেকে! এবার একটা মজার ইনফো দেই। কুকরিতে বিশাল এক রেস্ট হাউজ নির্মানাধীন। এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভাল।
আপনি চাইলে একাও কুকরি মুকরি থেকে ঘুরে আসতে পারেন। মন ভরে যাবে, প্রমিজ।
এবার আসুন দেখি কিভাবে যাবেন। সদরঘাট থেকে লঞ্চ ফারহান ৫/৬ সন্ধ্যে ৭ টার দিকে ভোলার বেতুয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০ টাকা। ২য় তলার ডেকে সুইটেবল একটা জায়গা নিয়ে বসে যান সকাল অবধি। সকাল ৬ টার দিকে বেতুয়া নামবেন। বেতুয়া থেকে নসিমন বা অটোতে চর ফ্যাশন। ভাড়া ৩০ টাকা (নসিমনে)। এবার চর ফ্যাশন বাস স্টেশনের পাশেই জ্যাকব টাওয়ার। টাওয়ারটা একটু দেখে দ.আইচার বাসে উঠে যান। ভাড়া ৪০ টাকা। আইচাতে নেমে অটোতে করে চর কচ্ছপিয়া ঘাট ১০ টাকা। সকাল ৯ টা এবং ১২ টায় কুকরি মুকরির ট্রলার যায়। আপনি ১২ টার ট্রলারটাই পাবেন। উঠে যান আর চোখ কচলে নিন। সামনেই সহ্যের বাইরে সৌন্দর্য আপনার অপেক্ষায়। প্রায় ঘন্টাদেড়েকের ট্রলার ভ্রমণে সরু খাল ধরে আপনি এক সময় পৌছে যাবেন কুকরির খালে ভাড়া ৪০ টাকা। একটু হেঁটেই বাজারে যান। বাজারে হোটেল আছে থাকার, আছে পরিষদের ডাক বাংলো। আছে বাবুল মাঝির একটা ডেডিকেটেড রুম আর মিষ্টি ব্যবহার। উনাকে ফোন দিন আর আথিতেয়তা নিন। খাবার দাবার আর থাকা তাঁর বাড়িতেই করুন। দ্বীপে ঘুরুন বাকি বেলা। পরদিন ট্রলার রিজার্ভ করে সোনার চর, শীপ চর, তাড়ুয়া বীচ ঘুরুন। সারা দিনে ২৫০০ টাকার মত দিলেই হবে। আপনাকে তিন দিনের ট্যুর প্লান করেই কুকরিতে যেতে হবে। ঢাকা থেকে আগেই ফোনে সব না করে অন স্পটে করুন। আগে থেকে কন্ট্রাক করলে খরচ বেশি চাইবে। আগে যান, তারপর দেখুন দ্বীপের মানুষগুলো কত্তো ভালো। ইনফ্যাক্ট, পুরো ভোলার মানুষগুলোকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।
#বাবুল মাঝির নাম্বারঃ 01745432237
#হাসেম মাঝিঃ 01767494294
বাবুল মাঝির ঘরটা ভালো। আরো আপগ্রেড করছে। টয়লেটটা মোটামুটি বাট চলবে।
চাইলে আমাদের ট্রিপটা একটু দেখে নিতে পারেন। অনেক ইনফরমেটিভ।
কুকরি মুকরি:
https://www.facebook.com/groups/648420725312136/permalink/755119864642221/
সোনার চর, শীপ চর, ঢাল চর:
https://www.facebook.com/groups/648420725312136/permalink/756087581212116/
অতি দীর্ঘ আলোচনার পরিশেষে এটাই বলা যায়, আপনার জন্য চমৎকার একটা ট্রিপ অপেক্ষা করছে। ৬-৮ জনের একটা টিম হলে ২,৫০০+ টাকাতেই ঘুরতে আসতে পারেন একদম নিখাদ সৌন্দর্যের মাঝে।
রুট প্ল্যানঃ ঢাকা-বেতুয়া-চর ফ্যাশন-দ.আইচা-কচ্ছপিয়া ঘাট- চর কুকরি মুকরি।
So, The Island of Dogs & Cats are waiting for your footprints… 👣👣
লেখা: @Rafiqul Islam
Posted on নভেম্বর 24, 2017, in Uncategorized. Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.
এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান
Comments 0