নাপিত্তাছড়া অভিযান…
নাপিত্তাছড়া অভিযান…
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ভোর ৫.০০ টায় ফজর সলাতের পর খিলক্ষেত, রামপুরা, বাসাবো আর সাইনবোর্ড থেকে আমি (আকিক রাসেল), হামিদুল হক, শাওন, আনিস, জাহিদ আর সুদীপ বণিক মিলে মাইক্রোবাসে চেপে বসলাম।
গন্তব্য নাপিত্তাছড়া আর খৈয়াছড়া ঝর্ণা, মিরসরাই, চট্টগ্রাম।
যাওয়ার পথে ৮.৩০-এ হোটেল Highway Inn এ সকালের নাস্তা সারলাম। ৩০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু হলো।
বেলা ১০.৩০ মিনিট নাগাদ প্রবেশ করলাম মিরসরাই উপজেলায়। ১০.৫০ নাগাদ বড় তাকিয়া বাজারে পৌঁছে গেলাম। মিরেরসরাই ক্রস করার পর বরতাকিয়া বাজার। বরতাকিয়া ক্রস করার পর রাস্তার ডানে একটি সুন্দর মসজিদ দেখতে পাওয়া যায়, আসলে এটিই ন দুয়ারি বাজার। রাস্তার বাম পাশে বাজারের ভিতরে প্রবেশ করে হাটা শুরু করলেই আপনি পেয়ে যাবেন নাপিত্তাছড়ায় যাওয়ার পথ।
ইট বিছানো কিছুটা পথ হাঁটার পরই চোঁখে পড়বে সবুজে ঘেরা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলা মেঠো পথ। পথের মাঝে দেখা হয়ে গেল কয়েকটি ভ্রমণপিয়াসী গ্রুপের ভাইয়া ও আপ্পিদের সাথে। তাদের সাথে তাদের কিছুটা অভিজ্ঞতা ও রোমাঞ্চকর মুহূর্ত শেয়ার করে আবারো এগিয়ে চললাম। মোটামুটি মিনিট পনের হাঁটার পর দেখা মিললো রেল লাইনের। রেল লাইনের পাশেই অর্ডারী হোটেল (অর্থাৎ এডভান্স টাকা দিলে আপনার জন্য চাহিদা মাফিক রান্না করে রাখবে) দেখতে পেলাম। ভাত, মাছ, মুরগীর গোস্ত, গরুর গোস্ত, ভর্তা, ডাল অনেক কিছুই সুলভ মূল্যে খাওয়া যায় এখানে।
রেললাইন পেরোলেই পাহাড়ে ঢোকার মূল পথ। আমরা রেললাইনে কিছুক্ষণ ফটোসেশন করে নিলাম। এরপর রেললাইন পেরিয়ে আবার হাঁটা শুরু, লোকালয় শেষ হয়ে আসছিলো আর আমাদের সাথে বন-পাহাড়ের দূরুত্ব কমে আসছিলো। সবাই একজন গাইড নেয়ার প্রয়োজন অনুভব করলেও আমি ছিলাম ব্যতিক্রম, আমার যুক্তি ছিলো- অচেনা পথে এগিয়ে চলাটাই একটা অ্যাডভেঞ্চার। এ পথে আমরা সবাই ছিলাম একেবারেই আনকোরা! মেঠো পথ ছেড়ে ঢুকে পরেছি পাহাড়ী ঝিরিপথে। মাঝে মধ্যে দু-এক একজন লোকাল মানুষ পেয়ে জিজ্ঞেস করতে করতে এগিয়ে চললাম। যদিও নিশ্চিত ছিলাম এই ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে গেলে ঝর্ণার দেখা পাবোই পাবো!
পাওয়া তথ্য মতে এই ঝিরিপথে মোট ঝর্ণা আছে মোট ৩ টি। কুপিকাটাখুম, বাঘবিয়ানি এবং বান্দরাখুম।
চলতি পথে প্রথম বাঁধা আসলো মোটামুটি উঁচু জলপ্রপাতের এক পাহাড় বেয়ে উপরে উঠা নিয়ে। আমাদের ছয়জনের দু’জন ক্ষান্ত দিলেন পথ চলায়। পাহাড় ডিঙ্গিয়ে বাকী চারজন উপরে উঠেই দেখা পেলাম প্রথম ঝর্ণার। নাম তার কুপিকাটা খুম। এর সৌন্দর্য মোটামুটি। এর শুরুতে চমৎকার কিছু সিঁড়িসমৃদ্ধ ধাপ আছে।
কুপিকাটাখুম এ গোসল করে আবার হাঁটা পথে এগিয়ে যাবো, এমন সময় আমাদের সাথের আরেকজন ক্ষান্ত দিলো পথচলায়। কি আর করার, তিন জনেই এগিয়ে যাচ্ছি। চলতে গিয়ে অবশ্য কয়েকটা বিপদজ্জনক বাঁকের মুখোমুখি হলাম। এ পথে আরও পেলাম পিচ্ছিল সব বিশাল বিশাল পাথর। একসময় ঝিরিপথ দু’দিকে ভাগ হয়ে গেলো! আমরা মহা দুশ্চিন্তায় পরে গেলাম। এবার বুঝি হারিয়ে গেলাম…!
যাক আল্লাহ্’র রহমতে দু’তিন জনের এক গ্রুপকে আসতে দেখলাম তারা বললো ডান দিকে একটা ঝর্ণা আছে পাঁচ মিনিটের পথ (নাম লতে পারলো না)। যাক বুকে সাহস ফিরে পেলাম। ঝর্ণায় আসার পথে কিছু পাহাড়ী আমলকী কিনে এনেছিলাম সেটাই এতক্ষণ চিবুচ্ছিলাম। এবার ঝর্ণার পানি পান করলাম ইচ্ছেমত আর আমলকীর কারণে স্বাদে তা অমৃতের মতো লাগলো।
আমরা আবার হাঁটা শুরু করলাম…। সত্যিই মিনিট পাঁচেক পর এক অপরুপ ঝর্ণার দেখা মিললো। এর নাম বান্দরা খুম। যদিও ঝর্ণায় ভরা যৌবণের দেখা পেলাম না অর্থাৎ পানি ছিলো তুলনামূলক কম তবুও নতুনত্বের স্বাদ মন্দ লাগেনি। বান্দরা খুমে আমার সঙ্গী দু’জন মনের সুখে গোসল করে ক্লান্ত শরীর চাঙ্গা করে নিলো।
এখানে পৌঁছুতে আমাদের তিনজনের সময় লেগেছে প্রায় ৪৫ মিনিট এর মতো।
ফেরার পথে যে জায়গায় পথ হারিয়ে ছিলাম সেই দুই ভাগ হওয়া ঝিরিপথের সংযোগ স্থলে পৌঁছলাম। আমরা গিয়েছিলাম ডানের ঝর্ণায় এবার রওনা দিলাম বামের পথে তৃতীয় ঝর্ণার সন্ধানে। মিনিট দশেক চলার পর দেখা মিললো তৃতীয় ঝর্ণা বাঘবিয়ানি’র। এটিতে পৌঁছতে যতটা কষ্ট হয়েছে সৌন্দর্য ততটা না হওয়ায় কষ্ট আরো বেড়ে গেলো। যাই হোক কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ফিরে চললাম ন দুয়ারি বাজারের উদ্দেশ্যে।
মাঝ পথে রেল লাইনের পাশে হোটেল থেকে তিনজনে পাহাড়ী ডাব খেয়ে নিলাম। আমাদের গ্রুপের বাকী তিনজন যে চক্করে পড়ে রয়েছে সে কাহিনী আজ গোপনই থাক।
একটা কথা না বললেই নয়, তা হলো- আমার দেখা এ পর্যন্ত সব থেকে সুন্দর ট্রেইল হলো নাপিত্তাছড়া।
আমরা এগিয়ে চলছি এদিনের পরের অভিযানে… খৈয়াছড়ার উদ্দেশ্যে….
Posted on মার্চ 29, 2017, in Uncategorized. Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.
এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান
Comments 0